শেষ আপডেট: 2nd January 2025 11:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শিবমন্দির-দরগা বিতর্কের মধ্যেই প্রতিবছরের মতো এ বছরেও আজমির শরিফের খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় 'চাদর' চড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই চাদর প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি জামাল সিদ্দিকির হাতে তুলে দেবেন। তাঁরা আজমির শরিফ দরগায় গিয়ে মইনুদ্দিন চিস্তির ৮১৩-তম উরস অনুষ্ঠানে পবিত্র সমাধিক্ষেত্রে সেই চাদর চড়িয়ে দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই চাদর চড়ানোর বিষয়টি এমন এক সন্ধিক্ষণে ঘটতে চলেছে, যখন হিন্দুপক্ষ এই দরগায় অতীতে শিবমন্দির ছিল বলে দাবি জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বিতর্ক নিয়ে এখন আদালতেও শুনানি চলছে। তার উপর অন্যতম মামলাকারী হিন্দু সেনার প্রধান বিষ্ণু গুপ্ত আলাদা করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি লিখে বার্ষিক উরস উৎসবে চাদর না চড়ানোর আর্জি জানিয়েছিলেন মোদীকে। কিন্তু, সেই আর্জিতে কান না দিয়েই প্রতিবছরের মতো এবারেও চিস্তির দরগায় চাদর পাঠাতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এর পিছনে বিশেষ রাজনৈতিক সঙ্কেত আছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই আজমির শরিফ দরগায় প্রতিবছর চাদর চড়িয়ে আসছেন। এ বছর নিয়ে মোট ১১ বার চাদর চড়াতে চলেছেন মোদী। গতবছরের উরসে প্রধানমন্ত্রীর হয়ে চাদর চড়িয়ে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও জামাল সিদ্দিকি। এ বছরে চাদর নিয়ে যাবেন রিজিজু ও সিদ্দিকি। তবে এবারের পরিস্থিতিতে সামান্য বদল ঘটেছে। মাসখানেক আগেই হিন্দু সেনার আর্জিতে রাজস্থানের আদালত একটি মামলা গ্রহণ করেছে।
হিন্দু সেনার দাবি, বিষয়টি এখন বিচারাধীন। তাই প্রধানমন্ত্রীর তরফে এই মুহূর্তে চাদর চড়ানোর কর্মসূচি যেন স্থগিত রাখা হয়। সংগঠনের সভাপতি বিষ্ণু গুপ্ত এক চিঠিতে লিখেছেন, আমি সঙ্কট মোচন মহাদেব মন্দিরের তরফে আবেদনকারী। আজমির পশ্চিম জেলা আদালত, রাজস্থানে বিষয়টির শুনানি চলছে। আমি আদালতের কাছে আবেদন করেছি যে, এই দরগার উপর আগে হিন্দুদের শিবমন্দির ছিল। এবং চৌহান সাম্রাজ্যের সেই মন্দিরের অস্তিত্ব নিরূপণে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে দিয়ে একটি সমীক্ষা করে দেখার আর্জি জানিয়েছি আদালতে। যা নিয়ে এখনও শুনানি চলছে।
তিনি আরও লিখেছেন, জি ২০ সম্মেলনে বিদেশি অভ্যাগতদের প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছিলেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল এক ছবির সামনে দাঁড়িয়ে। এই সেই নালন্দা, যাকে ধ্বংস করেছিল খিলজি বংশের শাসকরা। শুধু নালন্দাই নয়, চৌহান বংশের অজয় মেরু জায়গাকে ধ্বংস করে এখানকার শিবমন্দির ভেঙে এই দরগা নির্মাণ হয়েছে। সে কারণে আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন চাদর চড়ানোর কর্মসূচি বিরত রাখা হয়, তা নিয়ে আর্জি জানিয়েছেন হিন্দু সেনা প্রধান। কিন্তু, সেই আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই মোদী ফের একবার চাদর পাঠাতে চলেছেন আজমির শরিফে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছুদিনের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভার ভোট হবে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জেলযাত্রা ও মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পটভূমিতে হতে চলেছে বিধানসভা ভোট। তাই তার আগে হিন্দু সেনার আর্জি মেনে চাদর না চড়ালে তা ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে মুসলিম মহল্লায়। বিশেষত এবারের ভোটে আপ-বিজেপির প্রায় ৫০-৫০ সম্ভাবনা আছে সরকার গঠনের। সে কারণে মুসলিমদের জন্য সৌহার্দ্যের বার্তা দিতেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এলেন না। কারণ আজমির শরিফ দরগার উপর অগাধ বিশ্বাস ও ভক্তি রয়েছে শুধু দেশেরই নয়, বিদেশেরও বহু মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষের।