ডিজিটাল অ্যারেস্ট। প্রতীকী ছবি।
শেষ আপডেট: 29th October 2024 14:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' হয়ে থেকে, মুক্তি পেলেন হায়দরাবাদের এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী! স্বস্তির বিষয় হল, বছর চুয়াল্লিশের ওই ব্যক্তির কোনও টাকা খোয়া যায়নি। পুলিশের সহায়তায় সাইবার প্রতারণা এড়াতে পেরেছেন তিনি। নয়তো আরও বহু মানুষের মতোই অবধারিত ভাবে টাকা খোয়াতেন তিনি।
আর্থিক তছরূপের মিথ্যে অভিযোগ তুলে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয় তাঁকে। শেষে প্রযুক্তিগত ত্রুটির জেরেই মুক্তি পান তিনি। সর্বস্ব খোয়াতে গিয়েও অবশেষে সাইবার প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পান ওই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।
জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদের আইটি কর্মীকে টাকা পাচারের মিথ্যে অভিযোগের নাম করে ভয় দেখায় সাইবার অপরাধীরা। এমন খবর গত কয়েক মাস ধরে বারবারই সামনে এসেছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে।
তেমনই, ২৬ অক্টোবর ভোররাত ৩টে নাগাদ ওই ব্যক্তিকে ফোন করে অপরাধীরা। মুম্বই পুলিশ হিসেবেই নিজেদের পরিচয় দেয় তারা। ট্রুকলারেও এমনই নাম দেখায় তাদের। প্রথম ফোনকলটিতে তেমন গুরুত্ব না দিলে, তারা বারবার মেসেজ, ভয়েস কল ও ভিডিও কল করে ভয় দেখানো শুরু করে।
জানা গেছে, এভাবেই এক সময়ে ফোন করে তাঁকে ফোন না কাটার হুমকি দেয় অপরাধীরা। এমনকি কথা বন্ধ করলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মিথ্যে মামলা থেকে নাম তোলার নামে ওই আইটি কর্মীর কাছে ৪০ লক্ষ টাকা দাবি করে সাইবার অপরাধীরা। জানানো হয়, ওই টাকা দিলেই সব সমস্যা মিটে যাবে।
পুলিশ জানিয়েছে, এভাবে প্রায় ২৫ ঘণ্টা ধরে কথা বলতে বাধ্য করে অপরাধীরা। সেই সময়ে পরিবারকে জানালে ফল খারাপ হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। দেখানো হয় মামলার ভুয়ো নথি। জেনে নেওয়া হয় জমানো টাকার পরিমাণও।
পরিবারকে জানালে ফল ভালো হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয় ফোনের ও-পার থেকে। এমনকি ভুয়ো এফআইআরও মামলার নথিও দেখানো হয়। ভয় পেয়ে, নিজের জমানো টাকার পরিমাণও বলে দেন তিনি।
শুধু তাই নয়, প্রতারকদের কথা মতো বাড়ি ছেড়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে বাইকে করে গিয়ে একটি লজে গিয়ে ওঠেন ওই কর্মী। বাইক চালানোর সময়েও ফোনের ওপ্রান্তে ছিল অপরাধীরা। তারা ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে যে, পুলিশ তাকে খুঁজছে এবং তাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফাঁদে পড়ে আরটিজিএস করে ৪০ লক্ষ টাকা দিতে রাজিও হয়ে যান ওই কর্মী। অবশেষে ২৭ অক্টোবর ভোর চারটে নাগাদ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে, কোনওভাবে ফোনটি কেটে যায়। এর পরেই যেন সম্বিত ফিরে পান তিনি।
তড়িঘড়ি সাইবার ক্রাইম পুলিশকে গোটা ঘটনা জানান। কনস্টেবল এম গণেশ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আশ্বস্ত করেন এবং লজে গিয়ে পৌঁছন। পথে যেতে যে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে, ততক্ষণ একটানা তিনি নিজে ওই কর্মীর সঙ্গে কথা বলে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই কর্মীর প্রতিবেশীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকেও ওই লজে পৌঁছতে বলে পুলিশ।
শেষমেশ প্রতিবেশী ও পুলিশ পৌঁছয় লজে। ততক্ষণে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছেন ওই কর্মী। তার পরে তাঁকে শান্ত করে, তাঁকে দিয়ে প্রতারকদের সমস্ত নম্বর ব্লক করায় পুলিশ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সরকারি সিবিআই, নারকোটিক্স শাখা, আরবিআই, ট্রাই, শুল্ক বা আয়কর আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফোন করেন প্রতারকেরা।
ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর কোনও অভিযোগের কথা বলা হয়। কখনও আবার তাঁর সন্তানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, অভিযোগের পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। কখনও আবার ভুয়ো কান্না শোনানো হয় পরিজনের। এক বার ফাঁদে পা দিলেই ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ করা হয় সেই ব্যক্তিকে।
ফোন করার সময় যে তদন্ত সংস্থার নাম নিয়ে ফোন করা হয়েছে, সেই সংস্থার ইউনিফর্ম পরে থাকেন প্রতারকেরা। সংস্থার দফতরের আদলে ঘরও সাজানো হয়। তাই ভিডিও কলে সেসব দেখে যথেষ্ট বিশ্বাস করে ফেলেন 'টার্গেট' হওয়া ব্যক্তি।
এর পরে 'মামলা' থেকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে মোটা টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। এ ভাবেই সাধারণ মানুষদের থেকে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হাতিয়ে নেয় প্রতারকেরা। এই ফাঁদে পা দিয়ে ইতিমধ্যে বহু মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রবিবারই ভারতীয় সাইবার-নিরাপত্তা সংস্থা কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম অফ ইন্ডিয়া (CERT-In) দেশের অনলাইন প্রতারণা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে একডজন নতুন ধরনের প্রতারণার কথা বলে হয়েছে, যার মধ্যে ডিজিটাল অ্যারেস্ট অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন। সাবধান করে বলেছেন, ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’ বলে কিছু হয় না। দেশের কোনও আইনে এই ধরনের গ্রেফতারির কথা বলা নেই। তিনি সচেতনতা প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, এ ধরনের ফোন পেলে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনে সাময়িক ভাবে অ্যাকাউন্টগুলি ব্লক করার নির্দেশ দিতে হবে। পাশাপাশি, পুরো ঘটনার স্ক্রিনশট বা কল রেকর্ডিংয়ের মতো তথ্যও প্রমাণস্বরূপ সংগ্রহ করে রাখা যেতে পারে।