সংগৃহীত ছবি
শেষ আপডেট: 16 February 2025 06:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শনিবার রাত তখন ৯টা হবে। ভিড়ে থিকথিক করছে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশন। পা ফেলার জায়গাটুকু নেই। এই চিত্র মোটের ওপর রোজই থাকে। কেউ প্ল্যাটফর্মে শুয়ে আছেন তো কেউ বসে পড়েছেন চাদর পেতে। কেউ তার মধ্যেই ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। শনিবার ভিড়টা ছিল ডবল। আর বেশিরভাগ লোকজন লাইনের দিকে ও সিঁড়িতে ঠেলাঠেলি করছেন। মহাকুম্ভ ও আরেক দুর্ঘটনার সাক্ষী দেশ। ভিড় থেকে বের হল দেহ। চারিদিকে পড়ে চটি-জামা ও রক্ত। বিড়বিড় করে বলে গেল প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন। এপর্যন্ত এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। গুরুতর অসুস্থ প্রায় ১০। বাকি ছোটখাটো কার কোথায় লেগেছে, তার তো ইয়ত্তা নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একজন বলতে শুরু করেন, 'মগধ এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের আগেই প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১৫-তে পৌঁছে যায়, যার ফলে সেখানে বিশাল ভিড় জমে। অনেক যাত্রী রেলপথ অতিক্রম করে ট্রেনের বিভিন্ন কোচে উঠতে শুরু করেন এবং অন্যরাও প্ল্যাটফর্ম থেকে গিয়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন। হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এ ওর গায়ে তো ও আরেকজনের গায়ে পড়ে যান।'
ये तस्वीर बहुत विचलित कर देगी आखिर कैसे आदमी बच्चे को लेकर खड़ा होने का प्रयास कर रहा ???? ये कैसी आस्था 144 साल बाद वाली आस्था का सपना छोड़ दो वो बस एक भ्रम है जिसे कुछ **** ने फैलाया है ????
— Jyoti Yadav (@JyotiDeled) February 15, 2025
New Delhi Railway Station Stamped | नई दिल्ली रेलवे स्टेशन pic.twitter.com/PaSCFitpDk
ঘটনার পর রেলের দিকে আঙুল তোলে প্রায় সকলেই। কিন্তু রেলের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়, তারা ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেছিল। ব্যবস্থাও ছিল পর্যাপ্ত। ছিল অতিরিক্ত ট্রেন কিন্তু তাও মানুষের গাফিলতিতেই কার্যত এই দুর্ঘটনা ঘটে। রেলের এই দাবি অবশ্য মেনে নেয়নি নয়া দিল্লি স্টেশনের কেউই। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এলাকায় কোনও পুলিশই ছিল না। ভিড় সামলানো তো দূরের কথা। দুর্ঘটনার পর কেউ সাহায্য করতেও আসেনি। কেউই ছিল না ত্রিসীমানায়। উল্টে সেখানে উপস্থিত কুলিরা সকলে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন।
স্টেশনে কর্মরত এক কুলি জানান, প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫-তে মানুষের ঢল নেমেছিল বলা যায়। হাঁটার মতো জায়গাও ছিল না। তিনি বলেন, 'যখন পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে, তখন আমরা দ্রুত সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাই। অনেককে টেনে বের করেছি, এমনকি কয়েকটি মৃতদেহও উদ্ধার করেছি। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে আসে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।'
বিহারের বাসিন্দা পাপ্পু (দুর্ঘটনায় তাঁর শাশুড়ি মাকে হারিয়েছেন) জানান, দ্রুত চিকিৎসা পেলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হত। কিন্তু কে কী করবে। সবাই তখন নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত। তিনি বলেন, 'রাত ৯টার দিকে এটা হয়। কোনও পুলিশ ছিল না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারছিল না। সবাই শুধু নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।'
New Delhi railway station, stamped Indian population, definitely needs discipline
— KP (@withregardskp) February 16, 2025
Make everyone accountable Railway Minister, Railway Protection Force, Station managers, GMs , CGM of Railways and people itself. Life of an average Indian is so cheap.
Never understand why… pic.twitter.com/24moTTDe4h
অন্য আরেক যাত্রী জানান, পদপিষ্টের ঘটনা প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১৪-এর সিঁড়ি থেকে শুরু হয় এবং বহু মানুষ মাটিতে পড়ে গিয়ে চাপা পড়েন। 'আমার স্বামীও পড়ে গিয়েছিলেন, তবে আমরা সময় মতো তাকে টেনে বের করতে পেরেছিলাম। আমাদের সংরক্ষিত টিকিট থাকলেও আমরা ট্রেনে উঠতে পারিনি।'
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী এগিয়ে এসে বলতে শুরু করেন, ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নির্ধারিত একটি ট্রেন হঠাৎ করেই ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পাঠানো হয়। বিভ্রা তৈরি হয় মানুষের মধ্যে। তিনি বলেন, 'কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল না, ঘটনাস্থলে একটি পুলিশও উপস্থিত ছিলেন না। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ আসে।'
New Delhi: On the New Delhi Railway Station stampede, Raman, a shopkeeper and eyewitness, says, "There was overwhelming crowd. The crowd was so intense that I was unable to see anything. I was in my shop...After some time when the public was coming from that side then I got to… pic.twitter.com/wmDoYgNwb9
— IANS (@ians_india) February 16, 2025
স্টেশনে এসেছিলেন বাড়ির লোককে ছাড়তে। তিনিও ভিড়ে আটকে পড়েন। জানান, 'মানুষ জমতে থাকে, এক পর্যায়ে ৫-১০ মিটার জায়গাজুড়ে মানুষ পিষ্ট হতে শুরু করে। আমি আমার বাবার হাত ধরে ছিলাম, কিন্তু আমরা দু'জনই জনস্রোতে আটকে পড়ি।'
এই ঘটনার পর গভর্নর ভি. কে. সাক্সেনা প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলিকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি প্রশাসন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।