শেষ আপডেট: 10 May 2025 19:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চার দিন ধরে তীব্র সামরিক উত্তেজনা, হামলা ও পাল্টা হামলা এবং সীমান্তে রক্তক্ষয়ের পর অবশেষে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে (India Pakistan Ceasefire) সম্মত হল। শনিবার বিকেল ৫টা থেকে তা কার্যকর হয়েছে। দুই দেশের সামরিক আধিকারিকদের মধ্যে সরাসরি কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধবিরতির শর্তে পৌঁছনো গেছে জানিয়েছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি।
শনিবার বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে পাকিস্তানের ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস’ (DGMO) ফোন করেন ভারতের ডিজিএমও-কে। এর পর দুই দেশের সম্মতিতে স্থির হয়, সন্ধ্যা ৫টা থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে সমস্ত রকমের সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। যুদ্ধবিরতির শর্ত কার্যকর করার জন্য দুই দেশই নিজের নিজের সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। ১২ মে ফের দুই দেশের ডিজিএমও-দের মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন বিদেশ সচিব।
এই যুদ্ধবিরতির নেপথ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দু’দেশ। এই দায়িত্ববোধ ও প্রজ্ঞার জন্য দু’দেশকেই অভিনন্দন।”
সরকারি সূত্রের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত কয়েকদিন ধরে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে টানা আলোচনায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হচ্ছিল আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে। ভারত এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে সম্পূর্ণ নিজের শর্তে — এমনটাই দাবি নয়াদিল্লির।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ভারত ও পাকিস্তান সামরিক কার্যকলাপ বন্ধে একমত হয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান কঠোর এবং আপসহীন। এই অবস্থান ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।” ভারত এও স্পষ্ট করেছে যে, কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলাকে ভবিষ্যতে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র সমান হিসেবে বিবেচনা করা হবে — এই নীতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে বলেও সূত্রের খবর।
কূটনীতিকদের মতে, মূলত আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি হয়েছে। আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের শর্তস্বরূপ আমেরিকা যুদ্ধবিরতির দাবি জানায়। অবশিষ্ট অর্থ তখনই দেওয়া হবে, যদি ইসলামাবাদ চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে। এই আর্থিক চাপে পড়ে পাকিস্তান দ্রুত ভারতের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী হয়।
‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের আটটি মিলিটারি বেসে সুনির্দিষ্ট আঘাত হানে ভারত। যার মধ্যে ছিল রাডার ইউনিট, অস্ত্রভাণ্ডার এবং কমান্ড সেন্টার। পাকিস্তান পাল্টা হামলায় ভারতের বেশ কিছু হাসপাতাল ও স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই উত্তেজনার আবহেই আন্তর্জাতিক মহলে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধবিরতিতে সেই আশঙ্কার অবসান ঘটালেও, দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘উচ্চমাত্রার যুদ্ধপ্রস্তুতি’ বজায় রেখেই যুদ্ধবিরতির নিয়ম পালন করা হবে এবং পাকিস্তান যদি আবার আগ্রাসী মনোভাব দেখায়, তবে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
এই মুহূর্তে দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের পথে বড়সড় পদক্ষেপ হলেও, আস্থা ফিরে পেতে সময় লাগবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।