কাশ্মীরি ঘোড়াচালক আদিলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পরিবার
শেষ আপডেট: 25 April 2025 15:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পহেলগামের (pahalgam) ঘটনার দিন সন্ধে ছ’টা নাগাদ খবর পেয়েছিলেন কাশ্মীরের (kashmir) ঘোড়া চালক আদিলের (Syed Adil Husain Shah) বাবা, ছেলে আর নেই। সেই ছিল বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষ। কী হবে এরপর, কীভাবে তাঁদের সংসার চলবে- জানেন না তাঁরা। কিন্তু মনে একটাই শান্তি, ছেলে দেশের মানুষকে বাঁচাতে, তাঁদের স্বার্থে প্রাণ দিয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আদিলের বাবা হায়দার শাহ বলেন, ‘ওর জন্য গর্ব হচ্ছে আমার। সেটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এখনও। নাহলে আমার জোয়ান ছেলের মৃতদেহ দেখে, ওর মুখ দেখে আমিও ওইখানেই মারা যেতাম হয়তো। ওর মতো বাহাদুর ছেলের জন্যই বোধহয় আমি বেঁচে আছি এখনও। ও যে নিজের প্রাণ দিয়েও কিছু মানুষকে বাঁচিয়েছে, এটা জেনেই আমার মাথা উঁচু হয়ে যাচ্ছে গর্বে।’ কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে বাবার। বহুকষ্টে কান্না ধরে রাখেন তিনি।
মারা যাওয়ার আগে বাড়ির সঙ্গে শেষ কোনও কথা হয়নি আদিলের। কারণ উপত্যকায় (Baisaran Valley) নেটওয়ার্ক থাকে না। আদিলকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। সাড়ে চারটে নাগাদ যখন তাঁর ফোনে রিং হতে থাকে, পরিবার ভেবেছিল তাহলে বোধ হয় আদিল নীচে নামছে উপত্যকা থেকে। কিন্তু কেউ ভাবতে পারেননি যে হাসিখুশি আদিল নয়, তাঁর নিষ্প্রাণ শরীরটা নামছে উপত্যকা ছেড়ে।
প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও সাধের টাট্টুঘোড়াটিকে নিয়ে বৈসরন উপত্যকায় (Baisaran Valley) চক্কর কাটছিলেন আদিল হুসেন শাহ (Syed Adil Husain Shah)। সাড়ে তিনটে নাগাদ গুলি চলার গমগমে আওয়াজ আর মানুষের চিৎকার উপত্যকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আদিল কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখতে পান চোখের সামনে এক জঙ্গি। বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পর্যটকদের দিকে। সেই মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি আদিল। ছুটে গিয়ে কেড়ে নিতে চান জঙ্গির হাতের বন্দুক। তখনই হাতাহাতি (jammu and kashmir terrorist attack)। আর তার জেরে বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারান তিনি।
নিশানায় না থেকেও এক নিরীহ পর্যটকের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নিজেকেই মৃত্যুর হাতে তুলে দেন আদিল। মৃত ২৬ জনের তালিকায় নাম রয়েছে এই কাশ্মীরি ঘোড়াচালকেরও।
জঙ্গিরা যখন বেছে বেছে গুলি করছিল হিন্দুদের, আদিল তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কেড়ে নিচ্ছিল বন্দুক। কেউ হয়তো মনে না রাখলেও, এটাই লেখা হয়ে থাকবে কাশ্মীরের (jammu and kashmir) ইতিহাসে।