শনিবার সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোনও দেশই কোথাও গুলি-গোলা চালাবে না। কিন্তু ওমর-সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, পাকিস্তান কথা রাখেনি। ফের গুলি চালিয়েছে।
ওমর আবদুল্লাহ
শেষ আপডেট: 12 May 2025 11:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাশ্মীরের পহেলগামে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের ওপর নারকীয় জঙ্গি হামলার পর পরিস্থিতি এক লহমায় বদলে যায়। অর্থনীতি, কূটনীতি—সবকিছুই যে পথে এগোচ্ছিল, তা আচমকা থমকে গেল বলে জানালেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'এই হামলা কয়েক বছরের পরিশ্রম এক মুহূর্তে নষ্ট করে দিয়েছে। পর্যটন আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, আমরা ভেবেছিলাম সুখের সময় আসছে। কিন্তু পাকিস্তান আবারও সুযোগ পেয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীর ইস্যু তুলে ধরল।'
কোভিডের পর থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল কাশ্মীর। ভয় কাটিয়ে ভূস্বর্গে যেতে শুরু করেছিলেন পর্যটকরা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে প্রচার বাড়ছিল, লোকজন যাচ্ছিল। সকলের মুখেই ধীরে ধীরে হাসি ফুটতে শুরু করে। কিন্তু সে হাসিই কাল হল কাশ্মীর বাসীর। বলা ভাল, গোটা দেশের। এর প্রেক্ষিতেই ওমর আবদুল্লাহর কথায়, বর্তমানে কাশ্মীর যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেখানে আসার কথাই ছিল না। রক্তপাত, দুঃখ-কষ্ট, বিশৃঙ্খলা- ফিরে এল আবার। সবকিছু এক ঝটকায় বদলে গেল। কিন্তু ভেবে দেখলে কিছুই তো বদলে গেল না।
কাশ্মীরে সারা বছর পর্যচকরা যাচ্ছিলেন কিন্তু এই সময়টা অর্থাৎ মে-জুলাই, কাশ্মীরে গরম থাকে। শীতের আমেজ থাকে ফলে মনোরম আবহাওয়া। সঙ্গে এটা টিউলিপ ফোটার সময়। গত ২বছর এই সময় হোটেলে জায়গা দেওয়া যায়নি পর্যটকদের। দিনে ৫০ থেকে ৬০টা ফ্লাইট চলেছে শ্রীনগর বিমানবন্দরে। স্কুলে গরমের ছুটি পড়তে বহু মানুষ উপত্যকায় শীতের আমেজ নিতে ছুটে গেছে। কিন্তু এবার পুরো শুনশান। বাজছে না স্কুলের ঘণ্টা, নেই পড়ুয়াদের ভিড়। মোঘল গার্ডেনগুলোয় শুধুই নিরাপত্তারক্ষী। থমথমে চারিদিক।
কাশ্মীরের এই অবস্থা হওয়ার পিছনে পাকিস্তানের মদতপুস্ট জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। ভারতীয় সেনা তাদের ঘাঁটি পাকিস্তানে ঢুকে গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছে। পাকিস্তানকে তার ভাষায় জবাব দেওয়া হয়েছে। নিরীহদের রক্ত, দেশের বীর সন্তানদের বলিদান বিফলে যায়নি। কিন্তু তবুও কি ছন্দে ফিরবে কাশ্মীর? উপত্যকাকে ভরসা করতে পারবে পর্যটকরা? ওমর বলছেন, কিছু বদলায়নি—পাকিস্তান আবার পরিকল্পনা করে কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা উদ্বেগজনক।
তাঁর দাবি, 'ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এতদিন যে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর ছিল, সেটাও এখন ভেঙে পড়েছে। আজ রাতের মধ্যে কী হয়, আমরা তা দেখছি। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে পহেলগাম পর্যটকে ঠাসা ছিল। কিন্তু তারপর...।'
শনিবার সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোনও দেশই কোথাও গুলি-গোলা চালাবে না। কিন্তু ওমর-সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, পাকিস্তান কথা রাখেনি। ফের গুলি চালিয়েছে। ঘটনার ধিক্কার জানায় দিল্লি। অস্বীকার করে পাকিস্তান। শনিবার রাত পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলার পর রবিবার খানিকটা থিতু হয়। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, গুলি চললে গোলা চলবে এদিক থেকে। যথাযথ পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন।
এই আবহে আজ, সোমবার দুই দেশের সেনা প্রধানদের মধ্যে বৈঠক রয়েছে। কী সিদ্ধান্ত হয় সেই বৈঠকে সেদিকে তাকিয়ে সকলে।