শেষ আপডেট: 10th June 2024 07:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা আকছার দাবি করতেন (লোকসভা ভোটের আগে) সংখ্যালঘু মুসলমানদের একাংশও নাকি এখন তাঁদের ভোট দিচ্ছেন। আবার অনেকেই বলতেন, সেই দাবি ফাঁপা। তবে তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায়, শুভেন্দুদের দাবি কিছুটা হলেও সত্য, তাহলে এর পর বাংলায় সংখ্যালঘুদের কাছে শুভেন্দু-সুকান্তদের কোনও মুখ থাকল কি?
রবিবাসরীয় সন্ধেয় রাষ্ট্রপতি ভবনের উঠোনে নরেন্দ্র মোদী সহ ৭২ জন শপথ নিলেন। সেই ৭২ জনের মধ্যে একটি মুসলিম মুখও দেখা গেল না। এমনকি শরিক দল তেলগু দেশম বা সংযুক্ত জনতা দলও কোনও মুসলিম মুখকে মন্ত্রী করল না। পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশের মতে, এও এক বিষ্ময় বইকি। উপর্যুপরি সরকারে ধারাবাহিক ভাবে দেশের সংখ্যালঘুদের কোনও প্রতিনিধিই নেই। কেউ বা আবার বলছেন, নো ভোট তাই নো পোস্ট। অর্থাৎ সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে বা তাদের শরিকদের ভোট দেয়নি। তাই তাদের জন্য পদও নেই।
সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার যে উৎসাহ দেখা যায় না তা নতুন নয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকেই সেই প্রবণতা তৈরি হয়েছে। গোধরা কাণ্ডের পর তা আরও তীব্র হয়েছে। অটল বিহারী বাজপেয়ীও সেই সার সত্য বুঝতেন। তিনিও মানতেন, মুসলিমদের আস্থা অর্জন করা বিজেপির জন্য কঠিন। তবু বাজপেয়ী জমানায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু মুখ ছিল। মোখতার আব্বাস নকভিকে ৯৮ সালে মন্ত্রী করেছিলেন বাজপেয়ী। তিনি প্রথমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রতি মন্ত্রী হয়েছিলেন। পরে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
বাজপেয়ী জমানার অবসানের পর বিজেপির রাজনীতিতে লালকৃষ্ণ আডবাণী বিজেপির সভাপতি হন। তাঁর লক্ষ্য ছিল ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী হয়ে ওঠা। সম্ভবত ভারতে সংখ্যালঘুদের বার্তা দিতে পাকিস্তান সফরে গিয়ে ‘কায়েদ এ আজম’ মহম্মদ আলি জিন্নাহর প্রশংসা করেছিলেন আডবাণী। তিনি বলেছিলেন, জিন্নাহ ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। সেই মন্তব্যের জন্য সঙ্ঘ পরিবারের চাপে দলের সভাপতির পদ ছাড়তে হয় আডবাণীকে।
তবু প্রথাগত ভাবে হলেও বিজেপিতে সংখ্যালঘুদের একটা প্রতিনিধিত্ব ছিলই। ২০১৪ সালেও মোদী মন্ত্রিসভায় দুটি সংখ্যালঘু মুখ ছিল। নাজমা হেপতুল্লাহ ও মোখতার আব্বাস নাকভি। কিন্তু মোদীর দ্বিতীয় মেয়াদ থেকে মন্ত্রিসভায় আর সংখ্যালঘু মুখ নেই। এবারও দেখা গেল না।
ভারতবর্ষে মুসলমানদের জনসংখ্যা কমবেশি ২০ কোটি। ১৪০ কোটির দেশে হিন্দু জনসংখ্যার তুলনায় অনেক অনেক কম। আবার ২০ কোটি জনসংখ্যাও কম নয়। পৃথিবীর বহু দেশে মোট জনসংখ্যাই ২০ কোটির কম। যেমন বাংলাদেশ। অথচ এত বিপুল সংখ্যক মানুষের কোনও প্রতিনিধি কেন্দ্রের সরকারেই থাকল না। রবিবার রাতে বহু কোটি মানুষেরই নজরে পড়ল তা।