পুনেতে ইন্দ্রায়নী নদীর উপর ৩০ বছর পুরোনো একটি সেতু ভেঙে পড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫০ জনের বেশি আহত হন। সেতুর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অতিরিক্ত ভিড়কে দায়ী করা হচ্ছে।
পুণের সেতু বিপর্যয়ে মৃত চার।
শেষ আপডেট: 16 June 2025 05:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ৩০ বছর পুরনো সেতু ভেঙে পড়ে বড় বিপর্যয়। রবিবার, মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার তালেগাঁও সংলগ্ন কুন্দমালায় ইন্দ্রায়নী নদীর উপর সেতুতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ছিলেন ভেঙে পড়ার সময়। তাঁদের বেশিরভাগই নদীতে পড়ে যান। অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সোমবার সকালে ১৫ ঘণ্টার দীর্ঘ উদ্ধার অভিযানের পর অভিযান শেষ হয়েছে। মোট ৫৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় মিলেছে।
সেতুটি মোট ৪৭০ ফুট দীর্ঘ। প্রথম অংশটি ৭০–৮০ ফুট লম্বা পাথরের ঢালু, তারপর দুটি ১০০ ফুট দীর্ঘ লোহার অংশ এবং একটি ২০০ ফুটের সিমেন্টের অংশ রয়েছে। প্রস্থ মাত্র চার ফুট। একসঙ্গে বড়জোর একটি বাইক ও দু'জন মানুষ পার হতে পারে। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় সেতুতে ৭–৮টি মোটরবাইক ছিল এবং তার সঙ্গে ভিড় ছিল শতাধিক মানুষের।
সেখানে একটি সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড থাকলেও তাতে কেউ গুরুত্ব দেননি। বর্ষাকালের প্রবল বৃষ্টিতে নদী স্রোতও ছিল তীব্র।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক মাসে কুন্দমালায় পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রতি সপ্তাহান্তে প্রায় আট হাজার মানুষ এই সেতু ব্যবহার করতেন, অথচ সেতুটি সেই চাপ নেওয়ার মতো পোক্ত ছিল না। সেতুতে অনেক গর্তও ছিল, যা ঢাকতে স্থানীয়রা সিমেন্ট ব্লক ব্যবহার করতেন।
দু’বছর আগে স্থানীয় গ্রামবাসীরা গণপঞ্চায়েত ও জন নির্মাণ দফতরকে লিখিতভাবে সেতু সংস্কারের অনুরোধ জানান। তবু কোনও কাঠামোগত নিরীক্ষা করা হয়নি।
২০২৪ সালে বিজেপি বিধায়ক তথা মন্ত্রী রবীন্দ্র চৌহান সেতু সংস্কারের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। কিন্তু সেই অর্থ কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি ২০১৭ সালেই প্রাক্তন বিধায়ক দিগম্বরদাদা ভেগডে নতুন সেতুর দাবিতে সরকারকে চিঠি লেখেন এবং বিষয়টি সংসদেও তোলেন। কিন্তু প্রশাসন তাতেও সাড়া দেয়নি।
এমনকি রবিবার দুপুর ১২:৩০ নাগাদ এক স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে সেতুর উপর অতিরিক্ত ভিড়ের কথা জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিন পুলিশ অফিসার এসে জনতাকে সরিয়ে দেন। কিন্তু তাঁদের চলে যাওয়ার পরপরই ফের ভিড় জমে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেতুটি দুলতে থাকে এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় ১৫ মিনিট ধরে জলে লড়াই করে একটা পাইপ ধরে কোনওভাবে উঠতে পেরেছেন কেউ কেউ। আরেকজন জানান, ৫০ জনের বেশি মানুষ সেতুতে ছিলেন। অনেকে বাইক ও স্কুটার সেতুতে রেখেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সতর্কতার সাইনবোর্ড কেউই মানেননি।
ফলে সব মিলিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেতু বিপর্যয়ের পিছনে শুধুই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, প্রশাসনিক অবহেলাও স্পষ্ট। যে ঝুঁকির কথা আগে থেকে জানা ছিল, তাতেও কোনও রকম মনোযোগ দেওয়া হয়নি। কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে কেউ ভাবেইনি, অডিট দূরের কথা। বারবার আবেদন, বরাদ্দ অর্থ, সতর্কতা সত্ত্বেও যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়, তবে এই ধরনের ঘটনা বারবারই ঘটবে বলে অভিযোগ।