যাদের গুলিবৃষ্টিতে স্বর্গের মতো সুন্দর ভূস্বর্গে উত্তাপ ছড়িয়েছে, তাদের পাকড়াও কিংবা নিকেশ করার কোনও দাবি সরকার এখনও করেনি।
মূল অপরাধীরা কোথায় বেপাত্তা হয়ে রয়েছে, তার ঠিকানা বের করতে ব্যর্থ গোয়েন্দারা।
শেষ আপডেট: 22 May 2025 07:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একমাস কেটে গেল। পহলগামে পাকিস্তানি মদতে জঙ্গি হামলায় নিহতদের পারলৌলিক যাবতীয় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, যে চার বা পাঁচ, ছয় জঙ্গি এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের খোঁজ কোথায়? আজ পর্যন্ত সেই তদন্তে কোনও মোচড় কিংবা সূত্র পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। অথচ, পহলগাম কাণ্ডের বদলা নিতে গত একমাসে পরমাণু যুদ্ধের দিকে গড়িয়ে গিয়েছিল উত্তেজনা। অপারেশন সিঁদুর-এর প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের মাটিতে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া, লস্কর ও জইশের তাবড় নেতাদের খতম করা ও তার জবাবে পাকিস্তানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। কোথাকার জল, কোথায় গড়িয়ে গিয়েছে। তবু যাদের গুলিবৃষ্টিতে স্বর্গের মতো সুন্দর ভূস্বর্গে উত্তাপ ছড়িয়েছে, তাদের পাকড়াও কিংবা নিকেশ করার কোনও দাবি সরকার এখনও করেনি।
পাকিস্তানের জঙ্গি মদত নিয়ে বিশ্বকে বোঝাতে দেশে দেশে রওনা দিয়েছে ভারতের সংসদীয় প্রতিনিধিদল। সিন্ধু জলচুক্তি বন্ধ করে রেখেছে ভারত সরকার। বন্ধ স্থল, জল ও আকাশ বাণিজ্যপথ। এত কিছু ঘটে গেলেও মূল অপরাধীদের সম্পর্কে গোয়েন্দারা শূন্যে ভাসছেন। দফায় দফায় খুচরো অপারেশন চালিয়ে জঙ্গি নিকেশের কাজ চলছে। সরকারের দাবি, তার মধ্যে অনেকেই লস্কর-জইশের হ্যান্ডলার রয়েছে। কিন্তু, মূল অপরাধীরা কোথায় বেপাত্তা হয়ে রয়েছে, তার ঠিকানা বের করতে ব্যর্থ গোয়েন্দারা।
পহলগামের জঙ্গিদের ধরতে সব কেন্দ্রীয় সংস্থার দুঁদে অফিসারদের নিয়ে তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছিল। তাতেও ফল কিছু ফলেনি। কাজের মধ্যে একটাই হচ্ছে, রোজই ভারত ও পাকিস্তানের ভিতর বাগবিতণ্ডা চলছে ও কূটনৈতিক লড়াই চলছে। যেমন-বৃহস্পতিবারই পাকিস্তান ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মীকে বিতাড়িত করেছে। এটা ভারতেরই জবাব। কারণ বুধবার ভারত পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মীকে নয়াদিল্লি ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটাই প্রথম নয়, এর আগেও একমাসের মধ্যে এরকম কাণ্ড ঘটেছে।
পহলগাম কাণ্ডের পর তদন্ত শুরু করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA)। যারা এখনও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ, পাকড়াও করে জেরা, সাক্ষীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ, ডিজিটাল ডেটা পরীক্ষা করে চলেছে। যাতে কোনও সূত্রে ঘাতক জঙ্গিদের খোঁজ মেলে। এখনও পর্যন্ত সন্দেহ, ওরা পাঁচজন ছিল, যাদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি। ঘটনার পর থেকে এনআইএ-র পদস্থ অফিসাররা কাশ্মীরে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ ও বাসিন্দাদের সাহায্যে তদন্ত চলছে। কিন্তু তা নিয়ে এজেন্সি মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। বেসরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত ১৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, এনআইএ স্থানীয় এক দোকানদারকে ডেকেও জেরা করেছে। ওই ব্যক্তি ঘটনাস্থলের কাছে ২২ এপ্রিলের ১৫ দিন আগে দোকান খুলেছিলেন। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে সেদিন তাঁর দোকান বন্ধ ছিল। তাঁকেও বারবার জেরা করে প্রামাণ্য যোগসূত্র মেলেনি। এছাড়া জানা গিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই জঙ্গিরা অনলাইন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে তাদের অবস্থান বোঝা দুরূহ হয়ে পড়েছে। সুতরাং, দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু, যে ২৬ জনের পরিবার প্রকৃত দোষীদের শাস্তির জন্য মুখিয়ে রয়েছেন, তাঁদের মুখে এখনও হাসি ফোটাতে পারেনি সরকার। ময়দানি যুদ্ধ হোক কিংবা কূটনৈতিক লড়াই, তাঁদের প্রত্যেকেই চাইছেন, গুলি করা ঘাতকদের চরমতম শাস্তি দেওয়া হোক, যদিও এখনও তারা অধরাই।