শেষ আপডেট: 1st February 2025 10:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইতিহাসের পাতা ছুঁয়ে দেশের একমাত্র অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা অষ্টমবার বাজেট পেশ করছেন নির্মলা সীতারামন। প্রতিবারের মতো এবারেও সকলের লক্ষ্য ছিল, রেকর্ড গড়ার মঞ্চে কী সাজে ধরা দেবেন সীতারামন। আগের সাতবারের মতোই শনিবারেও অত্যন্ত দুরস্ত অথচ বিদূষী সাজে সংসদে হাজির হলেন। এদিন তাঁর পরনে ছিল একটি সুন্দর ক্রিম রঙা মধুবনী শাড়ি। যাতে ছিল সোনালি সুতোর কাজ। তার সঙ্গে কনট্রাস্ট কালারের লাল ব্লাউজ। খুবই ছিমছাম সাজে অভ্যস্ত সীতারামনের হাতে ছিল সোনার বালা, গলায় একটি চেন, কানের দুল।
বিহারের মিথিলার একান্ত নিজস্ব শিল্পকৃতি হল মধুবনী আর্ট। যে শিল্পে থাকে প্রকৃতি ও ভারতীয় পুরাণের গল্পগাথা। মধুবনী এই শিল্পকৃতিটি পদ্মশ্রী প্রাপক দুলারি দেবীর তৈরি। যিনি ২০২১ সালে পদ্ম সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। নির্মলা যখন মিথিলা আর্ট ইনস্টিটিউটে একটি ঋণ প্রকল্পের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন, তখনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় দুলারি দেবীর। তিনি নির্মলাকে এই শাড়িটি উপহার দিয়ে বাজেটের দিন পরার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
লাল, নীল, হলুদ, বাদামি এবং অফ-হোয়াইটের সঙ্গে রক্তবেগুনি রঙের পাড়, সঙ্গে মানানসই ব্লাউজ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট প্রস্তাব পেশের এক-এক বছরে ছিল এক-এক রকমের দৃষ্টিনন্দন শাড়ি। প্রতিবার তাঁর শাড়ির নান্দনিকতা ও ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি ও কৃষ্টির এক ধারাবাহিক পরিচয় ফুটে ওঠে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
টানা আটবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করে এদিন রেকর্ড গড়লেন নির্মলা। এর আগের সাতবার সাতটি শাড়িতেও তিনি রেখেছিলেন রুচি-ভব্যতা ও দেশীয় শিল্প বিশেষত হস্ত ও কুটীর শিল্পের প্রতি তাঁর ভালোবাসার ছাপ। প্রতিবারই ছিল আঞ্চলিক তথা দেশের গৌরবময় সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। ওড়িশা থেকে কর্নাটক- তাঁর পরা শাড়িতে ক্ষণেক্ষণে এসেছে দেশের বিভিন্ন কোনার হস্তশিল্পের ছাপ। এমনকী অনেকে এও বলে যে, তাঁর শাড়ির আঁচলেই লেগে থাকে বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজ্যের প্রতিবিম্ব যার সঙ্গে যোগ থাকে তাঁর বাজেটেরও।
গতবছর জুলাইয়ে সীতারামন পরেছিলেন অফ-হোয়াইট রঙের মঙ্গলাগিরি শাড়ি। অন্ধ্রপ্রদেশের এই শাড়িতে ছিল লালচে-বেগুনি রঙের পাড়, সঙ্গে সিল্কের ব্লাউজ। মঙ্গলাগিরি শাড়ির সঙ্গেই সেবার বাজেটেও ছিল এনডিএ-র শরিক দল তেলুগু দেশম পার্টির রাজ্যের জন্য বিশেষ ব্যয়বরাদ্দ। সীতারামন ঘোষণা করেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পোলাবরম সেচ প্রকল্পের টাকা দেবে কেন্দ্র এবং তা সম্পূর্ণ করবে। অন্ধ্রের সেচপ্রকল্পে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এর আগে ২০২৪ সালেই অন্তর্বর্তী বাজেট পেশের সময় সীতারামন পরেছিলেন একটি নীল শাড়ি। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কাঁথা সেলাই করা ছিল তাতে। নীল শাড়ি পরার কারণ হিসেবে অনেকে ব্যাখ্যা করে থাকেন, সেবার তিনি সরকারের জলসম্পদ, জলজ উৎপাদন এবং মৎস্য উৎপাদনকে চাঙ্গা করার প্রকল্প ছিল। সেবার মৎস্য বিভাগকে ২৫৮৪.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব এনেছিলেন অর্থমন্ত্রী, যা তার আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি এবং সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল। কাঁথা শিল্প হল বাংলার অতি পরিচিত এক সূচি শিল্প, যা সাধারণত তসর সিল্কের উপর হাতে সেলাই করে তৈরি হয়। নির্মলা সীতারামন এই শাড়ি পরে এই শিল্পেরই প্রসার ও জনপ্রিয়তা তুলে ধরেন।
২০২৩ সালে নির্মলা পরেছিলেন লাল রঙের একটি মন্দির আঁকা পাড়ের শাড়ি। কর্নাটকের ধারওয়াড় এলাকার ইল্কাল সিল্ক শাড়ি। যাতে ছিল কাসুটি কাজ। এই শাড়িও পুরোপুরি হাতে বোনা তাঁতে তৈরি হয়। উল্লেখ্য, সীতারামন স্বয়ং কর্নাটক থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সদস্য। এই শাড়িতে হাতের কাজে রথ, ময়ূর এবং পদ্মফুল আঁকা ছিল।
২০২২ সালে একটি বাদামি বোমকাই শাড়ি পরেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ওড়িশার গঞ্জাম জেলার তাঁতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই শাড়ি পরেছিলেন সীতারামন। ২০২১ সালে তিনি বেছে নিয়েছিলেন অফ-হোয়াইট রঙের পচমপল্লি। হায়দরাবাদের পচমপল্লি গ্রামের হাতে বোনা তাঁতে তৈরি হয় এই শাড়ি, যা ভারত বিখ্যাত। হলুদ রঙের একটি রেশমি শাড়ি ও ব্লাউজ পরেছিলেন সীতারামন ২০২০ সালে। হলুদ রঙ হল সমৃদ্ধির প্রতীক। যে শাড়িতে দেশের সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য-পরম্পরা ও সাংস্কৃতিক বিশালত্বকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে একটি গোলাপি রঙের মঙ্গলগিরি শাড়ি পরেন নির্মলা। যাতে সোনালি রঙের পাড় ছিল।