শেষ আপডেট: 15th October 2024 12:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র ১ লক্ষ টাকায় চার চাকা গাড়ি! যেটা কেউ ভাবতে পারেনি তা করে দেখিয়েছিলেন রতন টাটা। তাঁর ন্যানো গাড়ি বিভিন্ন কারণে বাজারে সাফল্য না পেলেও এই প্রচেষ্টাকে সকলেই কুর্নিশ জানান। মধ্যবিত্ত মানুষকে অল্পদামে গাড়ি চড়ানোর প্রয়াস করেছিলেন রতন টাটা। কিন্তু হঠাৎ এই ভাবনা তাঁর কেন এসেছিল, সেই বিষয়টিই এখন এত বছর পর সামনে এনেছেন নীরা রাডিয়া।
প্রাক্তন কর্পোরেট পাবলিক রিলেশন অফিসার নীরা রতন টাটাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক কাছ থেকেই দেখেছিলেন। ১২ বছরে প্রথমবার কোনও সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি ন্যানো প্রকল্পের আসল কারণটি সামনে আনলেন। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ''উনি (রতন টাটা) সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্তদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। সাধারণ মানুষকে বাইকে চেপে যাতে ভিজতে না হয় তার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।''
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে একটি প্রসঙ্গ না তুললেই নয়। সালটা ছিল ২০০৩। সে বছর জুনের মাঝামাঝি মুম্বইয়ের ফ্লোরা ফাউন্টেনের বম্বে হাউসের অফিস থেকে এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান রতন টাটা। বৃষ্টির জেরে যানজটে থমকে গিয়েছে সামনের রাস্তা। রতন টাটা দেখেন রাস্তায় একটি টু-হুইলারে এক দম্পত্তি ও তাঁদের দুই শিশু সন্তান বৃষ্টিতে ভিজছে। চালক বাদে কারও মাথায় হেলমেট নেই। সেই দৃশ্য দেখেই কার্যত তাঁর মাথায় আসে আম-আদমির জন্য গাড়ি বানাতে হবে।
দিনসাতেক পর পুণেতে টাটা মোটরর্সের প্ল্যান্টে গিয়ে রতন টাটা সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের সেই দম্পতির কথা জানিয়ে গাড়ি তৈরির বিষয়টি বলেন। সে বছরই জেনেভায় কার ফেস্টিভ্যালে তিনি ন্যানো গাড়ির মডেল পেশ করেন। ১ লক্ষের কিছু বেশি টাকা দিয়েই সেই গাড়ি কিনতে পারতেন মানুষ। কিন্তু ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরকেই কেন বেছে নিয়েছিলেন রতন টাটা? এই বিষয়টিও খোলসা করেছেন নীরা।
সাক্ষাৎকারেই জানান, বাংলায় কর্মসংস্থান বাড়াতে চেয়েছিলেন টাটা। তিনি শুধু উন্নয়নের কথা ভেবেছিলেন, রাজনীতির কথা ভাবেননি। নীরা আরও বলেন, সিঙ্গুরের নাম শুনে প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ শুরুতে কাউকেই কোনও জায়গার নাম জানাননি টাটা। তিনি হয়তো হিসেব-নিকেশ করে দেখেছিলেন, ওই সময়ে বাংলায় ১ লক্ষের গাড়ি কেনা অন্যান্য রাজ্যগুলির থেকে বেশি সহজ হবে। তবে পরবর্তী সময়ে ন্যানো গাড়ি সেই উচ্চতায় পৌঁছতে না পারলেও রতন টাটার প্রয়াসকে সকলে সম্মান জানান।
সিঙ্গুরে আশিভাগ কারখানা হয়েও কেন ব্যর্থ হল ন্যানো প্রকল্প? রাজনৈতিক কারণ নিয়ে ওয়াকিবহাল সকলেই। কিন্তু আরও কিছু কারণ নজরে আসে। তার মধ্যে অন্যতম, সিঙ্গুরের কারখানায় কত লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাকরি হবে, অর্থনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, এসব বিষয়ে টাটারা গোড়াতেই নমো নমো করে দু-চার কথা বলে মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাঁরা সেইভাবে জনসংযোগই করতে পারেনি। পরে সিঙ্গুর থেকে গুজরাতের সানন্দে গিয়ে কারখানা করলেও ন্যানো গাড়ি কিন্তু বাজারে চলেনি। বহু বছর হল সেটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।