শেষ আপডেট: 14th August 2024 23:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাত কো কব্জা কর লো..।
সহজ বাংলায় তার অনুবাদ হল, ‘রাতকে দখল করে নাও’। যে অন্ধকার আমার আপনার মেয়ে, বোনকে ভয় দেখায়, তাঁদের উপর অত্যাচার করে, ধর্ষণ করে, খুন করে, সেই অন্ধকারকেই দখল করে নাও। যাতে আর আমার আর কোনও বোন, কোনও মেয়ের উপর সেই অন্ধকার যেন অমাবস্যা হয়ে নেমে আসতে না পারে।
১২ বছর আগে এই পথ দেখিয়েছিলেন ছাত্ররাই। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে এক রাতের বাসে নির্ভয়াকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনা এতটাই জঘন্য ও মর্মান্তিক ছিল যে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। সে বছর ৩১ ডিসেম্বর গোটা দেশ যখন বর্ষবরণের উৎসবে মজে, নির্ভয়া কাণ্ডের প্রতিবাদে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ডাক দিয়েছিলেন, ‘রাত কো কব্জা কর লো’।
যে রাত অভিশাপের মতো নেমে এসেছিল নির্ভয়ার জীবনে, তাকেই কব্জা করে নাও। সেই ছাত্র আন্দোলন ক্রমশই এক অভ্যুত্থানের চেহারা নিয়েছিল। পরদিন ইন্ডিয়া গেট চত্বরে থইথই করছিল প্রতিবাদী মানুষ ও ছাত্রছাত্রীদের ভিড়।
কলকাতায় বুধবারের রাত সেই অধ্যায় থেকেই যেন এক পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নেওয়া। এই আন্দোলনের ব্যাপকতা ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের তুলনায় অনেক ব্যাপক। কেবল একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, রাতকে দখল করে নিতে হাজার হাজার ছাত্র, যুব-মহিলা নামছেন পথে। প্রবীণ মহিলা বা পুরুষরাও পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে নেই জেলাও।
আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে যে স্নাতকোত্তর পড়া চিকিৎসককে, তাঁর মধ্যেই নিজের বোন, মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছে বাংলা। ফুঁসে উঠেছে বাংলা। বুধবারের রাতকে দখল করে নিতে চেয়ে বোঝাতে চাইছে এই অনাচারের একটা ইতি চাই। মহিলাদের নিরাপত্তার অধিকার চাই।
তবে অতীতে নির্ভয়া কাণ্ডেও যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই একই উদ্বেগ এবারও রয়েছে। নির্ভয়া কাণ্ডের বিরোধিতায় মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল বিজেপি ও আম আদমি পার্টি। কিন্তু ঘটনা হল, তারা যে ঘোলা জলে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চেয়েছিল তা পরবর্তীকালে স্পষ্ট হয়ে যায়। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানাতেই হাথরাসের মতো ঘটনা ঘটে গিয়েছে। দিল্লিও মহিলাদের জন্য ষোল আনা নিরাপদ করতে পারেননি কেজরিওয়াল।
সেদিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্য প্রাসঙ্গিক। মমতা এদিন বলেন, ''পাশবিক অত্যাচারে আমরাও ফাঁসি চাই। কিন্তু মৃত্যুর নামে রাজনীতি বরদাস্ত করব না।'' তিনি এও জানান, ঘটনার কথা শোনার পরই সারা রাত জেগে থেকে তদন্ত করিয়েছিলেন। রাত ২টো পর্যন্ত পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথাও হয়েছিল। আর ওই ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আসল খুনিকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই আরজি কর মামলার তদন্তভার গেছে সিবিআই-এর হাতে।