Advertisement
ন্যাশনাল হেরাল্ড কেলেঙ্কারি
Advertisement
শেষ আপডেট: 24 April 2025 12:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক পুরনো কেলেঙ্কারি ফের আলোচনার কেন্দ্রে। 'ন্যাশনাল হেরাল্ড' সংক্রান্ত বিতর্কে (National Herald Scam) এবার সরাসরি আঙুল উঠেছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তথা গান্ধী পরিবারের দিকে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) অভিযোগ এনেছে, সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী একটি সুচারু কৌশলে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি নিজের দখলে এনেছেন, যা কংগ্রেসের 'গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির ঐতিহ্য'রই আর এক প্রমাণ বলে দাবি বিজেপির।
কিন্তু এই কাহিনি নতুন নয়। এই বিতর্কের সূচনা আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে। ১৯৫০ সালে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, যিনি ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একাধিক চিঠির মাধ্যমে জওহরলাল নেহরুকে সতর্ক করেছিলেন 'ন্যাশনাল হেরাল্ড' পত্রিকার অর্থ সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে। প্যাটেলের আশঙ্কা ছিল, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যেভাবে সন্দেহজনক উৎস থেকে অর্থ নেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বড় দুর্নীতির রূপ নিতে পারে।
১৯৫০ সালের মে মাসে প্যাটেল নেহরুকে যে চিঠি লেখেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেন, হিমালয়ান এয়ারওয়েজ নামে এক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ৭৫ হাজার টাকার অনুদান দিয়েছে ন্যাশনাল হেরাল্ডে, অথচ এই সংস্থা তখন সরকারি চুক্তি পেয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার আপত্তি সত্ত্বেও। প্যাটেল স্পষ্ট করেন, এতে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দাতাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত, এবং ইউনিয়ন মন্ত্রী আহমদ কিদওয়াই লখনউয়ের বিতর্কিত ব্যবসায়ীদের থেকে অর্থ সংগ্রহে যুক্ত ছিলেন।
নেহরু সেই দিনই চিঠির জবাব দিলেও, তাঁর ভাষা ছিল অস্পষ্ট। তিনি বলেন, পত্রিকার সাধারণ ব্যবস্থাপক তথা তাঁর জামাই ফিরোজ গান্ধী বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। পরের দিন ফের প্যাটেল আর একটি চিঠিতে জানান, ওই অনুদানগুলোর পিছনে কোনও দাতব্য উদ্দেশ্য নেই, এগুলি নিছক বাণিজ্যিক বিনিয়োগ।
নেহরু পরবর্তী চিঠিতে জানান, তিনি তিন বছর ধরেই ন্যাশনাল হেরাল্ডের আর্থিক ব্যাপারে যুক্ত নন, এবং সেই দায়িত্ব অন্য এক জনের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে,' কিন্তু এটিকে নীতিগত নয়, বরং ব্যবসায়িক বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
আজকের দিনে সেই পুরনো সতর্কবার্তাগুলিই যেন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। ইডির অভিযোগ, 'ইয়ং ইন্ডিয়ান লিমিটেড' নামক একটি সংস্থা, যা মূলত সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর নিয়ন্ত্রণাধীন, আইনি ও আর্থিক ফাঁকফোকর ব্যবহার করে একপ্রকার নীরবে ন্যাশনাল হেরাল্ডের সমস্ত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছে। এটি নিছক 'কর্মচারী পুনর্গঠন' নয়, বরং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির কৌশল বলেই মনে করছে তদন্তকারী সংস্থা।
এই মামলার মূল আবেদনের পক্ষ ছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে এনেছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কংগ্রেস দল মূলত একটি পরিবার-নির্ভর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে ক্ষমতা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
কংগ্রেস অবশ্য এই পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করেছে। তবে বিজেপি এ ঘটনাকে কেবলমাত্র একটি দুর্নীতির মামলা নয়, নৈতিক বিচ্যুতি এবং কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতাদের উপেক্ষা করার পরিণাম হিসেবে দেখাতে চাইছে।
তবে এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বলছেন, সর্দার প্যাটেলের সতর্কতা যে কতটা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিল, আজ তা নতুন করে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। বিজেপির মতে, স্বাধীন ভারতের আদর্শ নির্মাতারা যেখানে দেশকে প্রাধান্য দিতেন, কংগ্রেস সেখানে পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপোষণের পথ নিয়েছে চিরকাল। ফলে ন্যাশনাল হেরাল্ড কেলেঙ্কারি আজ আর শুধু আদালতের মামলা নয়, বরং একটি বৃহত্তর নৈতিক বিচার।
Advertisement
Advertisement