শেষ আপডেট: 24th October 2024 12:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় দানার মোকাবিলায় ওডিশার বিজেপি সরকার এখনও পর্যন্ত ১০ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। পুরী-সহ রাজ্যের উপকূল এলাকা কার্যত জনমানব শূন্য। বালেশ্বর, কেন্দ্রাপাড়া, ময়ূরভঞ্জ, জগৎসিংপুর এবং পুরী, দানার আঘাতে এই পাঁচ জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি ধরে নিয়ে ওই জেলাগুলি জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। পাশাপাশি রাজ্যের বিজেপি সরকার ওই পাঁচ জেলায় ছয় জন পদস্থ আইএএস অফিসারকে এক মাসের জন্য পোস্টিং দিয়েছে। ওই পাঁচ জেলায় তাঁরা জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলা শাসক থাকার সময় একাধিরবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছেন। বর্তমান জেলা শাসকেরা এই একমাস প্রাক্তনীদের পরামর্শ চলবেন।
১৯৯৮-এর ঘূর্ণিঝড়ে ওডিশায় নজিরবিহীন ক্ষতি হয়। বালেশ্বর জেলার অর্ধেক এলাকা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছিল। মৃত্যু ছাড়িয়েছিল কয়েক হাজার। ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় ভেঙে পড়ে রাজ্যের অর্থনীতিও।
বিজু জনতা দলের কট্টর সমালোচকেরাও মানেন, সেই ভগ্নদশা থেকে রাজ্যকে উদ্ধার করার প্রধান কৃতিত্ব বর্তমান বিরোধী দলনেতা নবীন পট্টনায়েকের। টানা ২৪ বছর রাজ্য শাসন করার পর এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন তিনি।
দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত ওডিশা সরকারের নিজস্ব বাহিনী।
যদিও ওডিশার রাজনৈতিক মহলের একাংশ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবশত বলে থাকে নবীন এখনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না। এমনকী তিনি শয্যাশায়ী, বাড়িতেই মিনি হাসাপাতাল বানিয়ে চিকিৎসা চলছে বলেও খবর ছড়ায়। তার রেশ পড়ে ভোটের প্রচারে। বিজেপি ঘোষণা করে তারা ক্ষমতায় এসে নবীনের শরীর-স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং চিকিৎসা নিয়ে তদন্ত করাবে।
সেই নবীন সদ্য ক্ষমতায় আসা বিজেপি সরকারকে যথেষ্ট চাপে রেখেছেন ছায়া মন্ত্রিসভা গড়ে। বিধানসভা ভোটে হারের পরই তিনি দফতর ধরে ধরে দলের বিধায়কদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেন। দুর্যোগ প্রতিরোধ দফতরটি রেখেছেন নিজের হাতে। বিরোধী দলনেতা হিসাবে সরকারি সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নথিপত্র তাঁর কাছে আসে। তিনি এবং বিজেডির মন্ত্রীরা নিয়ম করে সেগুলি সরকারি দফতরগুলির কাজ পর্যালোচনা করছেন। যদিও রাজনৈতিক সৌজন্য মেনে নবীন এখনও কড়া ভাষায় আক্রমণ শুরু করেননি। তবে দেশের মধ্যে একমাত্র ওডিশাতেই পশ্চিমি বিশ্বের মতো ছায়া মন্ত্রিসভা আছে।
সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে রাখা হয়েছে উপকূলের বাসিন্দাদের।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রায় প্রতি বছর ওড়িশাকে একাধিক ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে হয়। পুরীর মতো পর্যটক প্রধান শহর ঝড়প্রবণ এলাকার মধ্যে থাকায় প্রত্যেকবার পর্যটকদের সরাতেই সরকারের বিপুল অর্থ খরচ হয়ে যায়। এছাড়া উপকূল এলাকার মানুষের সুরক্ষা তো আছেই। এই ব্যাপারে নবীনের কাজ জমানা নির্বিশেষে ভারত সরকার মেনে নিয়েছে, তাই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসীত হয়েছে। ফলে ১৯৯৮-এর পর ঘূর্ণিঝড় আরও শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেও হতাহতের সংখ্যা নগন্য। উপকূল এলাকায় লাখ দশেক মানুষকে অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা নবীনই করে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে ত্রাণ শিবিরে বিশুদ্ধ পানীয় জল, তিনবেলা খাবার দেওয়ার পাকা ব্যবস্থা করা আছে। এখন আর ঝড়ের মুখে নতুন করে কোনও উদ্যোগ নিতে হয় না। বলা হয় নবীরের দীর্ঘ ইনিংশের পিছনে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পদক্ষেপগুলি রাজ্যবাসীর মনে পাকাপাকি দাগ কেটেছিল। রাজ্যের উপকূল অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা।
স্বভাবতই গত জুনে ক্ষমতায় আসা বিজেপি সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝিকে প্রতি মুহূর্তে নবীনের জমানার কাজ, প্রশাসনের দুর্গতদের পাশে থাকার নজিরগুলিকে বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম দানার মতো ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করতে নেমেছে প্রশাসন। সেই কাজে বিজেপি সরকার নবীনের জমানার দক্ষ এবং বিজেডি সরকারের আস্থাভাজন অফিসারদের উপরই ভরসা রাখছে বেশি। দলীয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে কেন্দ্রও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর যাবতীয় কর্মসূচি বাতিল করে দিল্লিতে থাকছেন। দুর্যোগ মোকাবিলার কাজ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উপর ন্যস্ত।