শেষ আপডেট: 29th January 2025 17:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কুম্ভমেলার প্রয়াগ সঙ্গমে শাহি স্নানের সময়ে ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়েছে ব্যারিকেড। বুধবার ভোর রাতে পদপিষ্ট (Maha Kumbh Stampede) হয়েছেন বহু মানুষ। সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ঘোষণা করা না হলেও, সূত্রের খবর, অন্তত ১৫ জন মারা গেছেন। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির অফিস অফ রেসিডেন্ট কমিশনারকে নবান্নের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়াগ-বিপর্যয়ের ঘটনায় বাংলার কেউ আটকে আছেন কিনা, সে বিষয়ে খতিয়ে খোঁজ খবর নিতে। উত্তর প্রদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তাঁকে।
উত্তরপ্রদেশের মহাকুম্ভ মেলায় সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ-কোটি মানুষ এসে ভিড় করেছেন। পুণ্য অর্জনের এমন সুযোগ ছাড়তে চাননি বহু পুণ্যার্থীই। তথ্য বলছে, সংখ্যাটা সব মিলিয়ে ৮ কোটি পেরিয়েছে। এর মধ্যে বাঙালিদের সংখ্যাও যে খুব একটা কম নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই বিষয়টিই মাথায় রেখে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে নবান্ন।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে লক্ষ লক্ষ ভক্তের জনস্রোত বইতে থাকে পুণ্যস্নানের উদ্দেশে। মধ্যরাতে এক সময়ে ভেঙে পড়ে ব্যারিকেড। হুড়োহুড়ির জেরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। সূত্রের খবর, অন্তত ১৫ জনের প্রাণ গেছে এই ঘটনায়। তবে সরকারি ভাবে এখনও মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি। এদিকে প্রয়াগরাজ পুলিশের তরফে ডিআইজি বৈভব কৃষ্ণ দাবি করেছেন, পদপিষ্টে যারা গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁদের চিকিৎসা চলছে। কেউই আশঙ্কাজনক নন, প্রত্যেকে বিপন্মুক্ত। মৃতের সংখ্যা নিয়ে তিনি কোনও 'রা' কাড়েননি।
পদপিষ্টের ঘটনার পরে গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সংযোগস্থল ত্রিবেণী সঙ্গম কার্যত খালি করে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন আবার সেখানে একে একে যেতে শুরু করেছেন সাধু-সন্ন্যাসী, ভক্তরা। তথ্য বলছে, মঙ্গলবার যখন পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে, তখন কুম্ভমেলায় হাজির ছিলেন ৮ কোটি মানুষ। এর মধ্যে শাহি-স্নানের উন্মাদনায় গা ভাসিয়েছিলেন সাড়ে ৫ কোটি।
কিছু পুণ্যার্থীদের বিরুদ্ধে ধাক্কা মারার অভিযোগও তুলেছেন কয়েকজন। তাঁরা দাবি করেছেন, ভিড় বাড়তে থাকলেও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি, উল্টে ধাক্কা মারা হয় জলের মধ্যে। তার জন্য আরও শোরগোল শুরু হয়। এই কারণে বহু ভক্ত মৌনী অমাবস্যার স্নান না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এত ভিড়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যে পদে পদে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সে জন্য সরকারি প্রস্তুতিও কম নেওয়া হয়নি গত কয়েক মাস ধরে। ১৪৪ বছর পরে ফিরে আসা এই মহাকুম্ভে ৪৫ দিনের এই মেলায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করেছিল। ঘোড়ায় চড়ে টহল দেওয়ার পাশাপাশি জলে মোতায়েন করা হয় ভাসমান পুলিশ চৌকি। নজরদারি রাখে হয় হেলিকপ্টারেও। কিন্তু বিপদ এড়ানো যায়নি। চলতি মাসের ১৯ তারিখেই আগুন লেগে ছাই হয়ে যায় একের পর এক তাঁবু। তার ১০ দিনের মাথায় ঘটে গেল পদপিষ্টের ঘটনা।
কুম্ভমেলায় এমন দুর্ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। মেলার ইতিহাস বলছে, এর আগেও পুণ্যস্নানে এসে পদপিষ্ট হয়েছেন বহু মানুষ। ১৯৫৪ সালের প্রথম কুম্ভমেলা থেকে ২০২৫, তালিকাটা খুব একটা ছোট নয়। এর আগে ১৯৮৬, ২০০৩, ২০১৩ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার দুপুরের কিছু পরেই ফের 'অমৃত স্নান' শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হওয়ার পথে। নতুন করে শাহি-স্নান শুরু হওয়ার সময়ে 'পুষ্পবৃষ্টি' করানো হয়।