শেষ আপডেট: 4th February 2025 13:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছবির নাম ‘যুগন্ধর’। সুরকার লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল। গীতিকার জাভেদ আখতার। প্রযোজকের আর্জি ছিল: একটি আরতি লিখতে হবে। কৃষ্ণ আরতি। যেখানে মুরলীধর, বংশীবিহারীর নাম থাকবে। অষ্টোত্তর শতনাম থেকে বেছে বেছে অন্ত্যমিল দিয়ে সেই আরতি কি রচনা করতে পারবেন জাভেদজি? প্রশ্ন ছিল তাঁর। উত্তর দিয়েছিলেন জভেদ আখতার, অনবদ্য একটি গান রচনা করে। যেখানে কৃষ্ণনাম ছাড়া অন্য কোনও শব্দ, বাক্য ব্যবহার করেননি মুসলিম গীতিকার।
জাভেদ আখতারের দেখানো পথেই এবার আরেক কদম এগিয়ে গেলেন ভোপালের আঞ্জুম বারাবাঁকি। কৃষ্ণ নয়। তিনি বেছে নিলেন রামকে। আরতি নয়। বেছে নিলেন গজলের মাধ্যম। ইসলাম-প্রভাবিত গজলের লব্জে মিশে গেল রামভক্তির সুর। জুটল প্রশংসা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর। চিঠি পাঠালেন নরেন্দ্র মোদী। আর এতকিছুর মধ্যে দাঁড়িয়ে যে কোনও বিতর্কে আপোষহীন থাকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন আঞ্জুম।
রামকে কেন্দ্র করে বাঁধা গজলের খবর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, আঞ্জুমের মতো মানুষেরাই দেশের গর্ব। তাঁদের কাজ দেশবাসীর মনে নতুন উচ্চতা ছোঁয়ার উদ্যম সঞ্চার করে। সেই সঙ্গে মুসলিম কবিকে কুর্নিশ জানিয়ে তিনি আরও যোগ করেন, ‘সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অমৃত কালের উদ্দেশে পা বাড়াতে চলেছি। এই ভবিষ্যৎ একই সঙ্গে জমকালো ও উন্নত। তোমার মতো দেশনাগরিকেরা যেভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন, তাতে আগামিতে ভারত সাফল্যের নতুন শৃঙ্গ ছোঁবে।‘
উল্লেখ্য, অযোধ্যায় রাম মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে এই গজল বেঁধেছেন আঞ্জুম বারাবাঁকি। উত্তরপ্রদেশের আওয়াধ-নিবাসী এই কবি এত হইচইয়ের মধ্যে যদিও আপাত-নির্বিকার। জানালেন, আজ নয়, ছেলেবেলা থেকেই তাঁকে গভীরভাবে প্রাণিত করেছেন ভগবান রাম। ধর্মের অনুশাসন কোনও বাধা হয়ে ওঠেনি। ধর্মগুরুদের চোখরাঙানিকেও তিনি উপেক্ষা করেছেন। রামের বিভিন্ন মূর্তি। বিভিন্ন ভূমিকায় তিনি আদৃত। কখনও অযোধ্যা-নৃপতি। কখনও জানকী সীতার স্বামী। কখনও লব-কুশের পিতা। আর সব ক্ষেত্রেই রাম আদর্শ স্থাপন করেছেন। প্রশ্নের ঊর্ধ্বে তাঁর চরিত্রের মহিমা। যা যে কোনও ধর্মের মানুষকে আকৃষ্ট করে। দাবি আঞ্জুমের।
এভাবে প্রকাশ্যে হিন্দুধর্মের দেবতা রামের ভক্তিভাব প্রচার করায় স্বধর্মের মৌলবিদের থেকে বিরোধ এলে পিছিয়ে আসবেন না তো? প্রশ্নের জবাবে তাঁর আরাধ্য রামের মতোই অকুতোভয় আঞ্জুম—‘আমি কোনও ফতোয়াকে ভয় করি না। এ সবকিছু আমায় প্রভাবিত করে না।‘
যদিও দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা হলেও হতাশ তিনি। জানালেন, ইদানীং ‘বন্দে মাতরমে’র মতো শব্দবন্ধ বলার আগেও লোকজন দু’বার ভেবে নেয়। এটা ঠিক নয়। তবে এই অবস্থা আগামিতে দ্রুত বদলাবে। আশাবাদী আঞ্জুম।