ফায়ার সার্ভিসের তরফে স্থানীয় দোকানদার ও বাড়ির মালিকদের সচেতন হতে বলা হয়েছে, যাতে এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে এড়ানো যায়। তার জন্য পদক্ষেপ করতে।
ঘটনাস্থলের ছবি
শেষ আপডেট: 18 May 2025 16:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাচের চুড়ি, থালা-বাটি-গ্লাস, নিমরার ধোঁয়া ওঠা চা, বা ফুটপাত ভর্তি আতর-মেহেন্দির দোকানে তখন ভিড় প্রায় নেই বললেই চলে। কেউ কেউ রাতের চারমিনার দেখতে হাজির হয়েছেন, সেল্ফি তুলছেন নিজেদের খেয়ালে। মুক্তোর দোকানের শাটারও নেমেছে। ঠেলা গাড়িগুলো কর্ন বা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে বাড়ি ফিরছে। তাই চারিদিকে যেমন গিজগিজ করে সারাটা দিন, কানে তালা লাগার অবস্থা হয়, সেটা নেই। নিভু নিভু আলোয় কয়েকজন ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঠিক সেসময়ই সারাদিনের কাজ সেরে একটু জিরিয়ে নিতে গেছিলেন অনেকে। কেউ শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলেন সন্তানের সঙ্গে, কেউ বা বাবা-মার সঙ্গে। আর ঠিক এই সময়ই জ্বলে ওঠে চারমিনার চত্বরের একটা বাড়ি। শান্ত এলাকা মুহূর্তে বদলে যায়, চিৎকার-চেঁচামেচি, দমকল কর্মীদের আওয়াজ আর আর্ত্মনাদে।
যাঁরা বাঁচলেন, তাঁরা কাঁদছেন পরিজনের জন্য, আর যাঁরা মারা গেলেন? নাহ তাঁদের কিছু তো বোঝাই গেল না। কিন্তু যাঁরা উদ্ধার করলেন, তাঁরা যে কত রাত ভয়ঙ্কর দৃশ্য ভুলতে পারবেন না তা কেউ জানে না। এমনই কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে উঠে এল মর্মান্তিক কিছু মুহূর্তের কথা। গা শিউরে ওঠার মতো সেসব অভিজ্ঞতা।
এর চুড়ির ব্যবসায়ী জাহির জানালেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই তাঁরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। বলেন, 'আমরা আগুন লাগার কিছু পরেই ভেতরে ঢুকেছিলাম। ভিতরে প্রচণ্ড ধোঁয়া আর আগুন। একটা ঘরের মধ্যে দেখি, একজন মহিলা তাঁর বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আর বাচ্চারা? ততক্ষণে সবাই পুড়ে গেছে।'
তিনিই সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ওই বাড়িটিতে ঢুকে তাঁরা সে অর্থে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। একটা দেওয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। জীবন বাজি রেখেই সকলে মিলে ১৩ জনকে উদ্ধার করেন কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছেন। কেউ আগুনে পুড়ে মারা গেছে, কেউ ধোঁয়ায় দম আটকে প্রাণ হারিয়েছেন।
দমকল বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগুন সম্ভবত বৈদ্যুতিক লাইনে ত্রুটির কারণেই লেগেছিল। আগুন লাগার সময় বাড়ির একমাত্র গেট থেকে বের হতে পারেননি কেউই। বুঝে ওঠার আগেই প্রায় সব শেষ। ওই বাড়ির একমাত্র প্রবেশপথ এতটাই সরু ছিল যে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানোও কঠিন হয়ে পড়ে।
তেলঙ্গানার ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ওয়াই নাগি রেড্ডি জানান, 'ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই দমকলের ইঞ্জিন এসে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, ওই বাড়িতে একটা মাত্র ঢোকার রাস্তা ছিল, সেটাও সরু সিঁড়ি দিয়ে। ফলে আগুন লাগলে বেরোনোর কোনও উপায়ই নেই। আগুন সম্ভবত মেইন ইলেকট্রিক লাইনে লেগে প্রথমে নীচের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে ধোঁয়া ও তাপ ছড়ায় ওপরের তলাগুলোতে। যাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন, তাঁরা ধোঁয়ায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং পালানোর সুযোগ পাননি।'
ফায়ার সার্ভিসের তরফে স্থানীয় দোকানদার ও বাড়ির মালিকদের সচেতন হতে বলা হয়েছে, যাতে এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে এড়ানো যায়। তার জন্য পদক্ষেপ করতে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর (PMO) থেকে মৃতদের পরিজনকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য করার ঘোষণা করা হয়।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্থ রেড্ডিও এই দুর্ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের।