শেষ আপডেট: 23rd July 2024 10:16
অনুপম নস্কর (কলকাতা এস্ট্রোনমি সেন্টার)
মহাজাগতিক বিস্ময় ছাড়া একে কী বলা যেতে পারে!
বুধবার মধ্যরাতে কলকাতা থেকেও দেখা যাবে সেই মহাজাগতিক বিস্ময়! ভারতীয় সময় অনুযায়ী ২৫ জুলাই, রাত ঠিক ১ টা ৩৭ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে শনি গ্রহ পুরোপুরি লুকিয়ে পড়বে চাঁদের পিছনে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় চাঁদের আড়ালে লুকিয়ে থাকার পর বেরিয়ে আসবে শনি। গ্রহণ কাটবে রাত ২ টো বেজে ৪৫ মিনিট ১ সেকেন্ডে। অর্থাৎ প্রায় ১ ঘণ্টা ০৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ড শনি গ্রহ অদৃশ্য থাকবে আমাদের চোখ থেকে। এই ঘটনাকে জ্যোতির্বিদ্যার ভাষায় বলা হয় “চাঁদের দ্বারা শনির সমাবরণ বা OCCULTATION।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, এই সমাবরণ বা OCCULTATION কি?
সমাবরণ হল মহাকাশে সংঘটিত হওয়া একটি বিশেষ ঘটনা। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। ঘোরার সময়ে যদি কোন মহাকাশীয় বস্তু ( গ্রহ বা নক্ষত্রকে ইত্যাদি ) পৃথিবী ও চাঁদের সাথে একই সরল রেখায় চলে আসে, তখন পৃথিবী থেকে মনে হবে সেই বস্তুটিকে চাঁদ ঢেকে দিল। এই ঘটনাটিকে জ্যোতির্বিদ্যার ভাষায় “সমাবরণ বা OCCULTATION” বলা হয়।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণও এক ধরনের ‘OCCULTATION’ বা সমাবরণ। সূর্য এবং চাঁদের আপাত কৌণিক আকার পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষকের কাছে প্রায় একই দেখায়। ফলে সূর্য, চাঁদের পিছনে একদম ঢাকা পড়ে যায়। অর্থাৎ দুটি গোলাকার চাকতি একে অন্যের সঙ্গে মিলে যায় । একইভাবে বৃহত্তর চাঁদ যখন একটি গ্রহ বা তারাকে ( কোনও মহাকাশীয় বস্তুকে) ঢেকে দেয়, তখন একে "চাঁদের দ্বারা সেই বস্তুটির সমাবরণ বা OCCULTATION বলা হবে।
শুধু এক্ষেত্রে চাঁদের আপাত কৌণিক আকার পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষকের কাছে অনেক বড় দেখাবে। কিন্তু ঢেকে যাওয়া বস্তুর ( গ্রহ বা নক্ষত্র ) কৌণিক আকার অনেক ছোট হয়। তাই দেখে মনে হবে যেন বিশাল এক দৈত্য-এর পিছনে একটা পিঁপড়ে লুকিয়ে পড়ল। আবার খানিক বাদে অন্য দিক থেকে চুপি চুপি বেরিয়ে এল।
সমগ্র পৃথিবী থেকে বুধবার শনির গ্রহণ দেখা যাবে না। ভারতবর্ষের পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্য অংশ থেকে ভালভাবেই তা দেখা যাবে। এছাড়া ভূটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চিন, নেপাল থেকেও দেখা যাবে।
এই অভূতপূর্ব দৃশ্য কলকাতা তথা ভারত থেকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল ২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায়। অর্থাৎ ১৭ বছর আগে। তারও আগে ২০০১ সালে ৭ অক্টোবর শনির গ্রহণ দেখা গিয়েছিল। কলকাতা অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার সন্তোষপুরে শনির গ্রহণ দেখার জন্য এবার একটি পর্যবেক্ষণ শিবির আয়োজন করেছে। এই বিস্ময়কর ঘটনা টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখার ও সমস্ত ঘটনা নথিভুক্ত করার জন্যে সেখানে থাকবেন সেন্টারের কর্তাব্যাক্তি ও সদস্যরা। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন এবং তারামণ্ডলের সাইন্টিফিক অফিসারও উপস্থিত থাকবেন ওই শিবিরে।