দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব সম্মত হয়েছেন যে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ফের একে অপরের রাজধানীতে হাই কমিশনার নিয়োগ করা হবে।
মুখোমুখি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কানাডার সদ্য অভিষিক্ত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি
শেষ আপডেট: 18 June 2025 02:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত প্রায় ২০ মাস ধরে চলা উত্তেজনার পরে অবশেষে বরফ গলল ভারত ও কানাডার সম্পর্কে। জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে মঙ্গলবার কানাডার কানানাসকিসে এক উল্লেখযোগ্য ‘ব্রেকথ্রু’ বৈঠকে মুখোমুখি হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কানাডার সদ্য অভিষিক্ত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি।
দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব সম্মত হয়েছেন যে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ফের একে অপরের রাজধানীতে হাই কমিশনার নিয়োগ করা হবে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে দু’দেশেই কোনও হাই কমিশনার নেই।
মোদী বৈঠককে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেন এবং জানান, ‘ভারত ও কানাডার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী কার্নি এবং আমি একসঙ্গে এই বন্ধুত্বকে নতুন দিশা দিতে প্রস্তুত।’
প্রধানমন্ত্রী কার্নিও জানান, দু’দেশ একযোগে যেসব বিষয়ে কাজ করবে, তার মধ্যে রয়েছে ‘আন্তর্জাতিক দমননীতি ও সন্ত্রাসবাদ রোধ’। পাশাপাশি, দুই দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে শক্তি নিরাপত্তা-সহ একাধিক খাতে যৌথ সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে বলেও জানান তিনি।
সম্পর্কের টানাপোড়েনের পটভূমি
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, খলিস্তানপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জরকে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে শহরে খুনের পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের ‘বিশ্বাসযোগ্য যোগসূত্র’-এর হাত থাকতে পারে। ভারতের তরফে ওই অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে খারিজ করে দেওয়া হয় এবং পাল্টা অভিযোগ ওঠে, কানাডা ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও চরমপন্থীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে।
এই ঘটনার পর দু’দেশের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে পৌঁছায়। কূটনৈতিক টানাপোড়েন এতটাই তীব্র হয় যে, ভারত তার হাই কমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা এবং পাঁচজন আধিকারিককে ফিরিয়ে নেয়। তার আগে, কানাডা তাদের কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ভারতের কূটনৈতিক সুরক্ষা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। জবাবে ভারত ছ’জন কানাডীয় আধিকারিককে বহিষ্কার করে, যার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারও ছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্ক কার্নির আমন্ত্রণে মোদীর এই কানাডা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে - বিশেষ করে প্রবাসী খলিস্তানপন্থী লবির আপত্তি সত্ত্বেও এই আমন্ত্রণ জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত দশ বছরে এটি মোদীর প্রথম কানাডা সফর। সদ্য অভিষিক্ত প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে তাঁর জয়ের জন্য অভিবাদনও জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিকে, কানানাসকিসে মোদীকে স্বাগত জানিয়ে কার্নি বলেন, ‘জি-৭-এ ভারত ২০১৮ সাল থেকে অংশগ্রহণ করছে। এটি ভারতের গুরুত্ব ও আপনার নেতৃত্বের প্রতিফলন।’ তিনি এই সাক্ষাৎকে ‘বড় সম্মান’ হিসেবেও অভিহিত করেন।
নরেন্দ্র মোদী এই সফরে আরও কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন — দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার নেতাদের সঙ্গে।
এই বৈঠকের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক যে নতুনভাবে শুরু হচ্ছে, তা বলাই যায়। এখন দেখার, কূটনৈতিক স্তরে এই ইতিবাচক বার্তা কতদূর গড়ায়।