শেষ আপডেট: 9th February 2024 19:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর আরও দুই প্রাক্তন কংগ্রেসী চৌধুরী চরণ সিং ও নরসিংহ রাওকে শুক্রবার মরণোত্তর 'ভারতরত্ন' সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চরণ সিং কংগ্রেস ছেড়ে প্রথমে জনতা পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে রাষ্ট্রীয় লোকদল নামে নিজের পার্টি গঠন করেন। অন্যদিকে, রাও ছিলেন আজীবন কংগ্রেসী। দু'জনেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
প্রয়াত চরণ সিংকে মরণোত্তর ভারতরত্ন ঘোষণার পর তাঁর নাতি জয়ন্ত চৌধুরী জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করেছেন। ফলে ইন্ডিয়া জোটের আরও একটি উইকেট পড়ল বলা চলে। পশ্চিম উত্তর প্রদেশের জাঠ ভোট পদ্মের বাক্সে টানতে মাত্র ২৪ দিনের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত চরণকে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে।
কিন্তু নরসিংহ রাও? আজীবন কংগ্রেসী রাও পুরো পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও অর্থ, বিদেশ-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলালেও শেষ জীবনে ছিলেন দলে পুরোপুরি ব্রাত্য। পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকা রাওকে মেয়াদ শেষে ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস টিকিট দেয়নি তাই-ই শুধু নয়, নানাভাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে অপদস্থ করে দল। এমনকী, ২০০৪ এর ২৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে প্রয়াত রাওয়ের দেহ রাজধানীতে দাহ করার অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। রাওয়ের পরিবারের আর্জি অগ্রাহ্য করে দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয় হায়দরাবাদে।
সেখানেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাওয়ের সৎকার নিয়ে চলে চরম বিশৃঙ্খলা এবং অবমাননা। ভারত সরকারের তরফে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেন শুধু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তিনি ছিলেন রাও মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী। অবিভক্ত অন্ধ্রে ক্ষমতায় তখন কংগ্রেসের ওয়াইএসআর সরকার। গান স্যালুট দেওয়ার পর দেহ চুল্লিতে তোলা মাত্র কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রীরা শ্মশান ঘাট ছেড়ে চলে যান। সেই ফাঁকে রাওয়ের আধ পোড়া দেহ কুকুরে টানাহ্যাঁচড়া শুরু করে। সেই ছবি স্থানীয় কেবলে দেখালে নতুন করে দাহের আয়োজক করে পরিবার।
এভাবেই রাওয়ের ঘাড়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পুরো দায় চাপিয়ে দিলেছিল সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর মসজিদ ধ্বংসের সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাও।
এটা ঘটনা, মসজিদ বাঁচাতে সেদিন কোনও পদক্ষেপ করেননি প্রধানমন্ত্রী রাও। তবে কংগ্রেস দলগতভাবেও কোনও পদক্ষেপ করেনি। কিন্তু মুসলিম সমাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় মুখে পরবর্তী কালে রাওকেই কাঠগড়ায় তোলে দল।
যদিও রাও প্রধানমন্ত্রী হওয়া মাত্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে মরণোত্তর ভারতরত্ন ঘোষণা করেন। আর রাজীবের বিরুদ্ধেই বাবরি মসজিদের তালা খুলে দিয়ে হিন্দুদের পূজা পাঠের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
রাজীবের সেই ভুলের কারণেই হিন্দুত্ববাদীরা রাম মন্দির ইস্যু নিয়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু রাজীব মসজিদের তালা খুলে দিলেও কংগ্রেস তাঁর ভূমিকার সমালোচনা করেনি কখনও।
আসলে সনিয়া গান্ধী রাওকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিলেও দক্ষিণী এই নেতা রাজীব পত্নীকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না।
রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর নরসিংহ রাওকে ভারতরত্ন সম্মান জানিয়ে নরেন্দ্র মোদী ফের বুঝিয়ে দিলেন কংগ্রেসে থেকে মর্যাদা না পাওয়া নেতাদের তিনি সম্মান দেন। যেমন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ওই সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছিলেন যোগ্যতা সত্বেও কংগ্রেস যাঁকে প্রধানমন্ত্রী করেনি।