শেষ আপডেট: 1st December 2023 13:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সালটা ২০০৮। ২৬ নভেম্বর। মাঝরাত। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাসের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে তখন শুধুই রক্ত আর চিৎকার। দুই যুবকের একে ৪৭-এ ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছেন ৫৮জন। আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন আরও ১০৪ জন। আর তখন একে ৪৭ হাতে দুই যুবক এক ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে চলেছে পাশের কামা হাসপাতালের উদ্দেশে।
নয় বছরের ছোট্ট মেয়েটি সেই রাতে বাবার হাত ধরে স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল পরিবারের অন্যরাও। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে ছাড়বে ট্রেন। সেই ট্রেনে চেপে ওরা সবাই যাবে পুণেতে। কিন্তু আচমকাই যেন সব ওলটপালট হয়ে গেল। বাচ্চা মেয়েটা দেখল একটা লোক হাতে বন্দুক নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করছে চারদিকের লোকজনকে। রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ছেন বহু মানুষ। ভয়ে বাবাকে আঁকড়ে ধরেছিল মেয়েটি। তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি এসে লাগে ছোট্ট মেয়েটার পায়ে। আর্তনাদ করে ওঠে সে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ছয়-ছয়টি অপারেশন হয়। বেঁচেও যায় মেয়েটি। ৯ বছরের সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ বছর চব্বিশের তরুণী। নাম দেবিকা রোটাওয়ান। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কমিটির প্রতিনিধিদের দেবিকা জানিয়েছেন, তিনি আইপিএস অফিসার হতে চান।
সেই রাতের ভয়ঙ্কর ঘটনা আজও ভুলতে পারেন না দেবিকা। আর কয়েক মাস পরেই ছিল জন্মদিন। স্টেশনে সে দিন যে জঙ্গি গুলি করেছিল ছোট্ট মেয়েটার পায়ে তার নাম আজমল কাসভ। ওই ঘটনার পর মুম্বই পুলিশের থেকে তার বাড়িতে টেলিফোন এসেছিল। দেবিকা জানিয়েছেন, জঙ্গিদের শণাক্ত করতে পারবে কিনা জানতে চায় পুলিশ। ভয় পায়নি ছোট্ট মেয়েটা। রাজি হয়ে গিয়েছিল। ভরা আদালতে দাঁড়িয়ে অকপটে কাসভের দিকে আঙুল দেখিয়ে জঙ্গিকে শণাক্ত করেছিল দেবিকা।
বিচারে কাসভের মৃত্যুদণ্ড হয় ২০১০ সালের মে মাসে আর তার দু’বছর পরে পুনের জেলে তার ফাঁসি হয়।
অভাবের সংসার ছিল দেবিকার। বাবা ড্রাই ফ্রুটস বিক্রি করতেন। বস্তির ঝুপড়ি ঘরেই তার বড় হয়ে ওঠা। কাসভকে শণাক্ত করার পরে তার পরিচয়ই হয়ে উঠেছিল ‘জঙ্গি আজমল কাসভকে শণাক্ত করেছে যে মেয়েটি।’ নামের পাশে তকমা সেঁটে গিয়েছিল—‘দেবিকা রোটাওয়ান ২৬/১১’। সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় বস্তি থেকে তাদের উঠে যেতে বলা হয়েছিল। তাড়িয়ে দিয়েছিল স্কুল। শিক্ষকদের আশঙ্কা ছিল হাইভোল্টেজ জঙ্গিকে চেনার পরে হয়ত হামলা হতে পারে তার উপর। বিপদে পড়তে পারে স্কুলের বাকি ছাত্রছাত্রীরাও। পরিস্থিতি শান্ত হতে ও ভয় কাটতে আরও বছর দুয়েক সময় লাগে স্কুল কর্তৃপক্ষের।
২৪ বছরেও অকুতোভয় দেবিকা। বস্তির ঘর ছেড়ে এখন তাদের ছোট্ট ফ্ল্যাট। মাস ছয়েক আগে শহরতলির দিকে ‘বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পে’ নির্মিত একটা বাড়ির সাত তলায় ২৭০ বর্গফুটের এক কামরার একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন তারা। দেওয়াল জুড়ে ২৬/১১ হামলার নানা ছবি, বহু সংস্থার দেওয়া পুরস্কার, রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুয়াতেরেসের সঙ্গে ছবি। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ভারত জোড়ো যাত্রাতেও দেখা গিয়েছিল দেবিকাকে। ২৬/১১-র সেই মর্মান্তিক ঘটনার গত ১৫ বছর পরেও বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া আর্থিক সাহায্যেই সংসার চলে তার। বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়, সেখান থেকেও কিছু আর্থিক সাহায্য আসে। এবার পুলিশের পরীক্ষায় বসতে চান দেবিকা। অপরাধের বিরুদ্ধে লড়তে স্বপ্ন দেখেন আইপিএস হওয়ার।