শেষ আপডেট: 7th December 2024 15:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলা-নির্যাতনের একের পর এক ঘটনায় দুই প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন তলানিতে, তখন মাথাচাড়া দিয়েছে প্রতিরক্ষা শক্তি ভারসাম্যেরও। এই পরিস্থিতি স্নায়ুর লড়াইয়ের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নিরাপত্তাজনিত বেশ কিছু সমস্যা। এদেশে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের উপর কট্টর গেরুয়াধারীরা বাংলাদেশের উপর চাপ বাড়ানোর দাবি তুলছে। পাশাপাশি ওদেশেও ইসলামপন্থীরা ভারত ও হিন্দু বিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে উত্তেজক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়। অন্যদিকে, নানানভাবে তলেতলে একটা অপপ্রচার শুরু হয়েছে। স্বার্থান্বেষী শক্তিরা ভিতরে-বাইরে যুদ্ধ যুদ্ধ প্রচার চালাতে শুরু করেছে। ১৯৭১ সালের মতো অবস্থা সৃষ্টি না হলেও সেই দৃষ্টান্তের কথা তুলে ধরে অনেকেই এর পিছনে চিন, আমেরিকা ও পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ উসকানি নিয়ে ফিসফিসানি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি পুরোপুরি সেদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হলেও নয়াদিল্লিও বিষয়টির উপর নজর রেখে চলেছে। এবং সেদেশের সংখ্যালঘু ও হিন্দুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার কথা অনবরত বলে চলেছে। কিন্তু, ক্রমাগত সেখানকার কট্টরপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে ভারত সরকারও উদ্বিগ্ন।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক ভারত ও বাংলাদেশের সমরশক্তি কার কতটা?
বাংলাদেশ
শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক এবং সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। কিন্তু, একথাও মনে রাখতে হবে যে, এই অঞ্চলে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তানের পরেই তৃতীয় শক্তি হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সামরিক শক্তিকে আড়ে-বহরে বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। যার নাম দেওয়া হয় ফোর্সেস গোল ২০৩০। ২০১৭ সালে এই পরিকল্পনাকে ফের পুনর্যোজনা করা হয়।
তারপর থেকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর খোলনলচে বদলে গিয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যই ছিল সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীকে আমূল সংস্কার আধুনিক করে তোলা। যার অঙ্গ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আধুনিক রাশিয়ান বিটিআর-৮০ এবং তুর্কি অটোকার কোবরা আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার কিনেছে। চিনের থেকে কিনেছে এমবিটি-২০০০ ট্যাঙ্ক এবং ভিটি-৫ লাইট ট্যাঙ্ক। গোলন্দাজ বাহিনীতেও এসেছে বেশকিছু তুরস্কের এবং চিনা সাঁজোয়া গাড়ি।
এছাড়াও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি নৌসেনাতেও আধুনিক সব অস্ত্র-সরঞ্জাম কিনেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে চিন থেকে কেনা ডুবোজাহাজ যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে বেশকিছু জলে ব্যবহারকারী অস্ত্র-ক্ষেপণাস্ত্র। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে যুদ্ধক্ষমতায় বাংলাদেশের স্থান ৩৭-এ। তবে মোট জনসংখ্যার নিরিখে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট হল ৬,৯৯৫,০৪০,০০০ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫০,৩০০,০০০,০০০ মার্কিন ডলার। মোট প্রতিরক্ষা কর্মী ৬৯ লক্ষ ৬৩ হাজার। তার মধ্যে সক্রিয় এক লক্ষ ৬৩ হাজার। সংরক্ষিত সেনা নেই। আধা সামরিক বাহিনী ৬,৮০০,০০০ জন। বায়ুসেনা রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০। নৌসেনা ২৫ হাজার ১০০।
মোট যুদ্ধবিমান আছে ২১৬টি। তৈরি রয়েছে ১৩০টি। এরমধ্যে ফাইটার বিমান ৪৪টি। হামলা করতে সক্ষম একটি বিমানও নেই। পরিবহণ বিমান রয়েছে ১৬টি। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃতি হয় ৮৭টি বিমান। হেলিকপ্টার ৭৩টি যার মধ্যে একটিও আঘাত হানতে সক্ষম কপ্টার নেই।
স্থলবাহিনীতে রয়েছে ৩২০টি ট্যাঙ্ক, ১৩ হাজার ১০০টি সাঁজোয়া গাড়ি, স্বয়ংক্রিয় গোলন্দাজ অস্ত্র ২৭টি প্রভৃতি। নৌবাহিনীর মোট সামগ্রী রয়েচে ১১৭টি। কোনও বিমানবাহী বা হেলিকপ্টারবাহী যুদ্ধজাহাজ নেই। সাবমেরিন রয়েছে ২টি টহলদারি নৌকা বা লঞ্চ রয়েছে ৫৫টি।
ভারত
যুদ্ধক্ষমতায় বিশ্বের মধ্যে ভারতের স্থান চতুর্থ। প্রতিরক্ষা বাজেট ৭৪,০০০,০০০,০০০ মার্কিন ডলার। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫৫৫,৩৮৮,০০০,০০০ ডলার। মোট প্রতিরক্ষা কর্মী ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০ জন। সক্রিয় কর্মী ১৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৫০। সংরক্ষিত বাহিনী ১১ লক্ষ ৫৫ হাজার। আধা সামরিক বাহিনী ২৫ লক্ষ ২৭ হাজার। বায়ুসেনা ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৫৭৫।
স্থলসেনা ২১ লক্ষ ৯৭ হাজার ১১৭ জন এবং নৌসেনা ১ লক্ষ ৪২ হাজার ২৫২ জন।
ভারতের হাতে মোট যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ২২৯৬টি। তৈরি রয়েছে ১৭২২টি। ফাইটার প্লেন রয়েছে ৬০৬, তৈরি রয়েছে ৪৫৫টি। হামলাকারী বিমান ১৩০, তৈরি রয়েছে ৯৮টি। পরিবহণ বিমান ২৬৪, তৈরি ১৯৮টি। প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত বিমান ৩৫১, তৈরি রয়েছে ২৬৩। হেলিকপ্টার ৮৬৯, তৈরি ৬৫২। অ্যাটাক কপ্টার ৪০, তৈরি ৩০টি।
স্থলবাহিনীর ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৪৬১৪টি। সাঁজোয়া গাড়ি রয়েছে ১৫১,২৪৮। ২টি বিমানবাহী জাহাজ সহ মোট ২৯৪টি নৌবহর রয়েছে। কপ্টারবাহী জাহাজ নেই। ডুবোজাহাজের সংখ্যা ১৮টি। এছাড়াও প্রাকৃতিক সম্পদে বাংলাদেশের থেকে কয়েকগুণ এগিয়ে ভারত।