শেষ আপডেট: 22nd February 2025 19:23
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দক্ষিণবঙ্গের গভীর অরণ্যে (South Bengal Forest) এবার হাতিদের (Elephants) জন্য তৈরি হচ্ছে এক স্বপ্নপুরী! যেখানে তারা নিশ্চিন্তে খেতে পারবে প্রিয় ফল, ঘাস, বাঁশ, এবং বিশাল জলাশয়ে গা ভিজিয়ে কাটাবে তৃষ্ণার্ত দুপুর। রাজ্যের বন দফতর (State Forest Department) এমনই ২২টি ‘মাইক্রোহ্যাবিটাট’ (Microhabitat) তৈরি করছে, যার লক্ষ্য মানুষ-হাতি সংঘাত কমানো এবং হাতিদের বনভূমির মধ্যেই ধরে রাখা।
এই প্রকল্পের আওতায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বনের ২২টি নির্দিষ্ট জায়গাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এখানে লাগানো হবে মহুয়া, আম, বেল, বর, নিম, বাঁশ, শিমুল, কলার মতো গাছ, যেগুলি হাতির প্রিয় খাদ্য। ইতিমধ্যেই সাতটি এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি বাঁকুড়ায়, দুটি পশ্চিম মেদিনীপুরে ও দুটি ঝাড়গ্রামে।
বন বিভাগের প্রধান সংরক্ষক এস কুলান্দাইভেল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, হাতিদের বন থেকে বের করা কিংবা তাড়ানোর চেষ্টা করলে ক্ষতির মুখে পড়ে মানুষও, হাতিরাও। তাই তাদের নিজস্ব বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
“এগুলোকে আমরা ‘মাইক্রোহ্যাবিটাট’ বলি। যেখানে ইতিমধ্যেই হাতিদের খাওয়ার মতো গাছ রয়েছে, সেখানে আরও গাছ ও ঘাস লাগিয়ে সমৃদ্ধ করা হবে। এছাড়াও, বড় জলাশয় খনন করা হবে, যাতে হাতির দল সেখানে এসে নির্ভয়ে থাকতে পারে,” জানিয়েছেন তিনি।
বন দফতরের মতে, পুরোপুরি গড়ে উঠতে পাঁচ বছর লাগবে, তবে তিন বছরের মধ্যেই হাতির দল সেখানে এসে ভিড় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে দুই পক্ষেরই লাভ— মানুষও নিরাপদ থাকবে, হাতিরাও বনেই খুঁজে পাবে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও জল।
বাঁকুড়ার বারজোড়া বনাঞ্চলে ইতিমধ্যেই সাতটি পুকুর খনন করা হয়েছে, যার ফলে সেখানে হাতি-মানুষ সংঘাত অনেকটাই কমেছে। কুলান্দাইভেলের মতে, যেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও জল থাকে, হাতিরা সেখানেই ফিরে আসে। কারণ তাদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন, হাতিদের বনেই ধরে রাখতে সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। “এটি তেমনই একটি উদ্যোগ। তবে মানুষেরও সচেতন হতে হবে। বনের মধ্যে হঠাৎ ঢুকে পড়া বা আতঙ্কিত হয়ে হাতিকে উত্তেজিত করার ঘটনা বন্ধ হওয়া দরকার। আমরা এ নিয়ে সচেতনতা প্রচারও চালাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।
গত বছর আগস্ট মাসে ঝাড়গ্রাম শহরে ঢুকে পড়া এক গর্ভবতী হাতি মারা গিয়েছিল, যখন তাকে তাড়ানোর জন্য ‘হুলা পার্টি’ জ্বলন্ত বর্শা ছুঁড়েছিল। এমনকি এই মাসের শুরুতেই জলপাইগুড়িতে গ্রামবাসীরা এক হাতিকে বুলডোজার নিয়ে তাড়া করায় সেটি গুরুতর আহত হয়।
এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতেই বন দফতর এবার হাতিদের জন্য ‘স্বপ্নপুরী’ বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ১৮০টি বন্য হাতি এবার কি এই নতুন অভয়ারণ্যে নিশ্চিন্ত আশ্রয় পাবে? সেটাই দেখার!