মৌনী অমাবস্যায় কুম্ভস্নানের ভিড়।
শেষ আপডেট: 29th January 2025 19:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রতি ১৪৪ বছরে একবার ফিরে আসে এই মহাকুম্ভ মেলা। সেই নিয়েই ৪৫ দিনের জন্য মেতে উঠেছে প্রয়াগরাজ। গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী নদির সঙ্গমে পুণ্যস্নান সেরে পাপমুক্ত হওয়ার নেশায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে ভিড় করেছেন ভক্তরা। এই স্নানেরও আছে রকমফের। বিশেষ মুহূর্তে ‘শাহি স্নান’ সারলে পুণ্যের পারদও চড়ে বলে বিশ্বাস। এবার মৌনী অমাবস্যার (Mauni Amavasya) পবিত্র দিনে তেমনই শুভ মুহূর্তে প্রায় ১০ কোটি তীর্থযাত্রী স্নান করতে সমবেত হন।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমে ডুব দিলে পাপমোচন হয় এবং মোক্ষ লাভ সম্ভব হয়। তার উপর এবারের কুম্ভ মেলাকে আরও বিশেষ করে তুলেছে বিরল গ্রহগত অবস্থান, যা ধর্মীয় মহলে বিরাট তাৎপর্য বহন করছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে তথা বুধবার কাকভোরে নির্দিষ্ট ‘সঙ্গম নাক’ এলাকায় চরম ভিড়ের কারণে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রয়টার্স সূত্রের খবর। ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অতিরিক্ত ভিড়কেই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে সকল তীর্থযাত্রীকে নির্দেশ দেন সঙ্গম নোজের দিকে না গিয়ে, নিকটবর্তী অন্য নানা ঘাটে ভক্তরা যেন স্নান সেরে নেন।
জানা গেছে, সকাল ৮:৩০ পর্যন্ত প্রায় ৩.৫ কোটি তীর্থযাত্রী কুম্ভ মেলায় ডুব দিয়েছেন এবং এদিন মোট উপস্থিত তীর্থযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
‘মৌনী’ শব্দটি সংস্কৃত ‘মৌন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ নীরবতা। ‘অমাবস্যা’ হল চাঁদহীন রাত। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, মাঘ মাসের অমাবস্যায় পালন করা হয় মৌনী অমাবস্যা। এবছর এটি শুরু হয়েছিল ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭:৩৫-এ এবং শেষ হবে ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬:০৫-এ।
এই দিনে পবিত্র স্নানকে ‘অমৃত স্নান’ বলা হয়, যা চারটি প্রধান স্নানের অন্যতম। বিশেষ করে সাধু-সন্ত ও আখড়াগুলোর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি। তারা বিশাল শোভাযাত্রা করে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে সঙ্গমে স্নান করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই বিশেষ দিনে সঙ্গমে স্নান করলে পূর্বজদের আত্মা শান্তি পায় এবং ‘পিতৃ দোষ’ বা পূর্বজদের পাপের প্রভাব দূর হয়। এটি পুনর্জন্মের বন্ধন ছিন্ন করে মুক্তির পথ প্রশস্ত করে।
পরিচিত আধ্যাত্মিক গুরু সদগুরু এই দিনের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন—
‘এই বিশেষ দিনে মহাজাগতিক শক্তি সর্বোচ্চ মাত্রায় সক্রিয় থাকে। মৌনতার সাধনা করলে মানুষ আত্মোপলব্ধি অর্জন করতে পারে। মৌনী অমাবস্যা থেকে মহাশিবরাত্রি পর্যন্ত নীরব থাকলে আত্মার বিশুদ্ধি ঘটে।’
কুম্ভ মেলায় মৌনী অমাবস্যা অন্যতম প্রধান স্নানের দিন। এবারের কুম্ভ মেলা অত্যন্ত বিরল, কারণ এটি ১৪৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং একটি বিরল গ্রহগত অবস্থান এই মেলার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দিনে পবিত্র স্নান করলে পাপমোচন হয়। পূর্বজদের আত্মার মুক্তির জন্যও এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আধ্যাত্মিক শক্তি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধু-সন্তরা এই দিনে তাঁদের বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।
মহাকুম্ভ ২০২৫-এ মৌনী অমাবস্যার দিন ঐতিহাসিক ভিড় হয়েছে। ১০ কোটি মানুষের সমাগম এবং পবিত্র স্নানের প্রতি তাঁদের অপরিসীম আকাঙ্ক্ষা ধর্মীয় বিশ্বাসের গভীরতাকে প্রমাণ করে। তবে, অতিরিক্ত ভিড়ের ফলে যেভাবে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণহানি ঘটেছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
সবচেয়ে বড় কথা, মহাকুম্ভ ২০২৫ এখনও বাকি আছে, এবং আরও দুটি বড় স্নানের দিন সামনে। প্রশাসন যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে সামনের দিনগুলোতেও অনুরূপ বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।