শেষ আপডেট: 26th February 2024 10:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেশে বহু মানুষ আছেন সারাদিনে যাদের ৪৬ টাকার বেশি খরচ করার উপায় নেই। এই ব্যয়ের মধ্যে খাবার ছাড়াও নিত্যকার প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসের দাম ধরা আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যা থেকে উঠে আসে অনাহার, অর্ধাহার, অপুষ্টির দিকটি।
ভারত সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও) তাদের মাসিক মাথাপিছু ভোক্তা ব্যয় সমীক্ষার ২০২২-’২৩-এর রিপোর্টে এই চিত্র তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে গড়ে একজন মানুষের মাসে গড় ব্যয় ক্ষমতা হল ৩৭৭৩ টাকা। যা শহরাঞ্চলে প্রায় দ্বিগুণ, ৬৪৫৯ টাকা। গ্রামের মানুষের মাসিক মোট গড় খরচের মধ্যে খাবার বাবদ ব্যয়ের অঙ্ক হল মাত্র ১৭৫০ টাকা। তারা গড়ে ২০২৩ টাকা খরচ করেন।
অন্যদিকে, শহরের মানুষ খাবারের জন্য মাথাপিছু মাসে ব্যয় করেন গড়ে ২৫৩০ টাকা। বাকি টাকা ব্যয় হয় বিদ্যুৎ, পানীয় জলের বিল, যাতায়াত খরচ, বাড়িভাড়া, টিফিন-সহ হাত খরচ, গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী ইত্যাদি খাতে। এই সব ক্ষেত্রে জাতীয় গড়ের থেকে সামান্য পিছিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা-সহ দেশের নয়টি রাজ্য। বাংলায় গ্রাম ও শহরে মাসিক গড় খরচের অঙ্ক হল যথাক্রমে ৩২৩৯ টাকা এবং ৫২৬৭ টাকা।
এনএসএসও তাদের রিপোর্টে আরও জানিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে গড় খরচের সারণির শেষের পাঁচ শতাংশের মাসে ব্যয় ক্ষমতা মাত্র ১৩৭৩ টাকা। শহরাঞ্চলে যার পরিমাণ হল ২০০১ টাকা। এনএসএসও-র ২০১১-১২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই সময় গ্রাম ও শহরে মাসিক মাথাপিছু ভোক্তা ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪৩০ টাকা ও ২৬৩০ টাকা।
সরকারি সংস্থার এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তাঁর সময়ে আর্থিক সাফল্যের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী এনএসএসও-র প্রাক্তন আধিকারিকেরাও সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের দাবি করা সাফল্য নিয়ে। বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আয়ের ফারাক নিয়ে সরব। রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় আর্থিক ক্ষেত্রে সুবিচার দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। সরকারি সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে ধনী-দরিদ্রের খরচের মধ্যে বিস্তর ফারাক। গ্রামে ও শহরে বহু মানুষ দিনে গড়ে সাড়ে দশ হাজার এবং ২১ হাজার টাকার কাছাকাছি ব্যয় করে থাকেন।
এই রিপোর্ট হাতিয়ার করে খাদ্য সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রী দীপা সিনহার বক্তব্য, মাত্র ৪৬ টাকায় সারাদিনের খরচ চালাতে হলে বোঝা যায় মানুষকে কেমন অসহনীয় অবস্থার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নয়নের দাবি করে থাকে, এই রিপোট তাতে প্রশ্ন চিহ্ন জুড়ে দিল।
প্রসঙ্গত, বিগত দু-আড়াই দশক হল, দারিদ্র পরিমাপের জন্য আয়ের পরিবর্তে ব্যয়কে মাপকাঠি করা হয়েছে। খাবার-সহ অত্যাবশ্যক, জরুরি কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দেখা সেগুলি ক্রয় বাবদ কী পরিমাণ অর্থ মানুষ খরচ করেন। সমীক্ষায় দেখা যায়, বহু মানুষ বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়াই দিন চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এনএসএসও এই সমীক্ষা চালায় ২০২২-এর অগাস্ট থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত। সারা দেশে দু লাখ ৬০ হাজার পরিবারের প্রায় ২৬ লাখ মানুষের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্টটি তৈরি করেছে তারা।