রামনবমীর শোভাযাত্রা (ফাইল চিত্র)
শেষ আপডেট: 17 April 2024 08:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লোকসভা ভোটের প্রথম দফা শুরুর মাত্র দুদিন আগে 'রামচন্দ্র' চলে এলেন রাজনৈতিক যুদ্ধের মধ্যস্থলে। বুধবার রামনবমী উপলক্ষে ভোটের বাজার গরম হয়ে উঠল নেতাদের বাক্যবাণে। অযোধ্যার নতুন রামমন্দিরে এ বছরই প্রথম ধুমধাম করে উদযাপিত হচ্ছে রামনবমী। আর তা নিয়ে শুক্রবার হতে চলা ভোটের শেষদিনের প্রচারের পারদ মধ্যগগনে চড়ল রাম-রাজনীতিকে কেন্দ্র করে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, রামনবমীর উৎসব ধর্মীয় লক্ষ্মণগণ্ডি অতিক্রম করে রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষত এ বছর লোকসভা ভোটের ময়দানে রাম-রাজনীতি আরও প্রকট হয়েছে। রামভক্ত বিজেপি লাগাতারভাবে প্রচারের অস্ত্র করছে এই বলে যে, বিরোধী দলগুলি অর্থাৎ ইন্ডিয়া জোট রাম তথা হিন্দুবিরোধী।
অন্যদিকে, কংগ্রেসসহ বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের মূল সমস্যা ছেড়ে বিজেপি রাম রাম করে মানুষের চোখ ধোওয়ানোর চেষ্টা করছে। রাম বিজেপির একার সম্পত্তি নয়। রামকে সামনে রেখে হিন্দুত্ববাদী দল দেশের সংহতি-সম্প্রীতির সম্পর্ককে ভেঙে টুকরো করার খেলায় মত্ত হয়েছে।
মন্দির রাজনীতির অঙ্গ হিসেবে বুধবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে তাবড় বিজেপি নেতারা রামনবমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে। মোদী এক্সবার্তায় বলেছেন, আজকের এই দিনটির জন্য কোটি কোটি ভারতবাসী দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। এই পবিত্র কাজের জন্য অগুনতি মানুষ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন। শাহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ৫০০ বছর অপেক্ষার পর রামলালা তাঁর জন্মস্থানে জন্মদিন পালন করতে চলেছেন। রামভক্তদের কাছে এর থেকে খুশির আর কী আছে!
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এর জবাবে বলেছেন, মর্যাদা পুরুষোত্তম রামকে নিয়ে ব্যবসা করছে কেন্দ্রের শাসকদল। বুধবার এক এক্সবার্তায় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রমেশ লিখেছেন, পবিত্র রামনবমীর দিনে সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। রামের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা দেখিয়ে রমেশ আরও লিখেছেন, মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম শপথরক্ষার জন্য নিজের সিংহাসন বিসর্জন দিয়েছিলেন। আর আজ সেই মর্যাদা পুরুষোত্তম রামের ব্যবসাদাররা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিশ্রুতিকে জলাঞ্জলি দিতে কসুর করছে না।
এদিকে, রামনবমীতেই 'কারাবাসী' অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি 'আপকা রামরাজ্য' নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করে দলের সাংসদ সঞ্জয় সিং বলেন, দিল্লিকে রামরাজ্যের মতো গড়ে তুলতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল অসামান্য কাজ করেছেন। পৃথিবীর সামনে দিল্লিকে আদর্শ রামরাজ্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন।
বিরোধীদের বক্তব্য, বেকারি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে রামকে নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। এদিন উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও বলেন, কখনও জলের তলায় চলে যাচ্ছেন তো কখনও আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না।
ফলে, সব মিলিয়ে প্রথম দফার ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে রাম ও মন্দির রাজনীতি নিয়ে দুপক্ষই তির চালাচ্ছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। শুধু এবারেই নয়, গতবছরেও রামনবমীর উৎসব পালন নিয়ে ৬ রাজ্যে অশান্তি ঘটেছিল। সংঘর্ষ হয়েছিল বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক এবং গুজরাতে। ২ জনের মৃত্যু এবং জখম হয়েছিলেন বহু। পুলিশের নির্দেশে হায়দরাবাদের একটি মসজিদকে কাপড়ে মুড়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, কেন এরকমটা হবে! অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইদের সময় তো কোনও মন্দিরকে নিরাপত্তার প্রশ্নে কাপড় দিয়ে ঢাকা হয় না!
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে ভারতের প্রতিটি কোণায় যে রামনাম প্রতিদিন উচ্চারিত হয়, তাকেই পাশা করে প্রথম দফার ভোটের সূচ্যগ্র মেদিনী জয়ের বর্ম পরে নিয়েছে সব দলই। আদতে প্রত্যক্ষ বিজেপি বিরোধিতার নামে গেরুয়াধারীদের হিন্দুত্ববাদকেই অজ্ঞাতে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে বিরোধীরাও।