শেষ আপডেট: 7 February 2024 20:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ রায় বেঁচে নেই বলেই ধরে নিয়েছিলেন। এক দশক বাদে তিনি ফিরেছিলেন ভাওয়াল সন্ন্যাসী হয়ে। তিনি কী সেই দাপুটে রাজা নাকি অন্য কেউ, সেই নিয়ে চলতে থাকে আইনি লড়াই। সেসব তো সেই ১৯২০ সালের ঘটনা-কাহিনি। ২০২৪ সালে যেন সেই ঘটনাই ফিরল একটু অন্য আঙ্গিকে। মায়ের কাছে সন্ন্যাসী হয়ে ফিরে এলেন তাঁর ২২ বছর আগে হারানো ছেলে। কিন্তু থিতু হলেন না। মায়ের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে ফের ঘর ছাড়লেন।
মার্বেল নিয়ে খেলায় মত্ত ছিল, তাই বকুনি দিয়েছিলেন বাবা-মা। অভিমানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ছেলে। বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আর ছেলের হদিশ পায়নি পরিবার। তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ২২ বছর। পথ চেয়ে বসে থাকা মা-বাবা আচমকাই দেখা পেলেন ছেলের। সন্ন্যাসী হয়ে গ্রামে ফিরলেন তাঁদের হারানো ছেলে। কিন্তু মায়ের কাছে এসেও ফিরে গেলেন যুবক।
নিঁখোজ ছেলের দু’ দশক পর ফিরে আসার ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি জেলার খরৌলি গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু তিনি যে ফিরতে আসেননি। সন্ন্যাসের নিয়ম মেনে মায়ের কাছে ভিক্ষা চাইতে এসেছেন। কিন্তু এত বছর পর ছেলেকে কাছে পেয়েও ফের হারাতে হবে ভেবে কান্না থামছে না মায়ের।
দিল্লিতে ২০২২ সালে ১১ বছর বয়সে রতিপাল সিং এবং ভানুমতীর ছেলে পিংকু বাড়ি থেকে নিঁখোজ হয়ে গিয়েছিল। মার্বেল খেলা নিয়ে বাবা-মা বকাঝকা করেছিল তাকে। ছোট্ট ছেলেটি অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। থানা-পুলিশ করে অনেক খোঁজাখুজিতেও ছেলের খোঁজ পায়নি সিং পরিবার।
সম্প্রতি খরৌলি গ্রামে পিংকুকে সাধুবেশে দেখা যায়। এতদিন বাদে তাঁকে ভিটেমাটিতে ফিরে আসতে দেখে অবাক হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। দ্রুত তাঁরাই যুবকের পরিবারকে খবর দেয়। শরীরের চিহ্ন দেখে ছেলেকে চিনতে পারেন বাবা-মা। কিন্তু বেশিক্ষণ ছেলেকে কাছে পাননি তাঁরা। মায়ের কাছ ভিক্ষা নিয়ে ফের বেরিয়ে পড়েন পিংকু। পরিবার সহ গ্রামবাসীদের কোনও অনুরোধই তাঁর পথ আটকাতে পারেনি।
পিংকুর বাবা অভিযোগ করেছেন, পিংকু যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত তারা তাঁর ছেলেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ১১ লক্ষ টাকা চেয়েছে। অসহায় বাবা বলেন, “আমার ১১ টাকাই নেই, কীভাবে ১১ লক্ষ টাকা দেব?’’ যদিও তিনি যে পরিবারের সঙ্গে থাকতে আসেননি তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পিংকু। মায়ের কাছ থেকে ভিক্ষা নেওয়া, সন্ন্যাস জীবনের আনুষ্ঠানিক রূপান্তর বলে চিহ্নিত করা হয়। আর সেই কারণেই ২২ বছর বাদে মায়ের কাছে ফিরে আসা বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মা-ছেলের আবেগঘন ‘পুর্নমিলন’-এর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে এক সাধুর বেশে দেখা গিয়েছে যুবককে। সারেঙ্গি বাজিয়ে বিষণ্ণ সুরে গান গেয়ে মায়ের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করছেন। হারানো ছেলের সেই দরদি গানে চোখের জল বাঁধ মানে না মায়ের। ছেলেকে ক্ষণিকের পাওয়া সেই কান্নাকে শুধু দীর্ঘস্থায়ী করে।