শেষ আপডেট: 9th February 2025 14:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা এক ব্যক্তি হঠাৎই তাঁর হারানো স্মৃতি ফিরে পেলেন, একটি মাত্র শব্দ শুনেই! ‘মহাকুম্ভ’। ঝাড়খণ্ডের কোডার্মার এই অবিশ্বাস্য ঘটনা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না ওই ব্যক্তির পরিবারও। এত বছর নিখোঁজ থাকার পরে তারা প্রকাশ মাহাতো নামের ওই ভদ্রলোকের ডেথ সার্টিফিকেটের জন্যও আবেদন করে ফেলেছিল।
জানা গেছে, কোডার্মার মারকাচো থানার কাদোদিহ গ্রামের বাসিন্দা প্রকাশ মাহাতো কলকাতা পৌর সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। তিনি নানারকম মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১০ সালের ৯ মে হঠাৎই তিনি বাড়ি থেকে কলকাতায় যাওয়ার পথে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। পরিবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করলেও, তাঁর কোনও সন্ধান মেলেনি।
এভাবেই ধীরে ধীরে কেটে গেছে ১৫টা বছর। পরিবার ধরেই নিয়েছিল, প্রকাশ মাহাতো হয়তো মারাই গেছেন। সেই মতো সরকারের কাছে মৃত্যুর শংসাপত্র চেয়ে আবেদনও করেছিল তারা। ভাবতেও পারেনি, তার পরেই খোঁজ মিলবে ঘরের ছেলের!
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জের একটি হোটেল থেকে খবর আসে, তাঁর হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তি আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। নিজের পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
ওই হোটেলের মালিক সুমিত সাও জানিয়েছেন, ১৫ বছর আগে তাঁর বাবা এক তরুণকে হোটেলে কাজ দিয়েছিলেন এবং সেখানেই তিনি থেকে যান। তিনি নিজের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি। হোটেলের কর্মচারীরা তাঁকে ভালবেসে ‘কুস্তিগীর’ নামে ডাকতেন, বড়সড় চেহারার জন্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানকার পরিবারের মতো হয়ে ওঠেন।
কিন্তু একদিন হঠাৎই সব মনে পড়ে যায় তাঁর। কারণ হোটেলের কর্মীরা মহাকুম্ভ মেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কথোপকথনের মাঝে হঠাৎই কুস্তিগীর জানান, তাঁকেও কুম্ভ মেলায় যেতেই হবে, কারণ তাঁর বাড়ি সেই পথেই। এর পরেই হোটেলের কর্মচারীরা তাঁর কথাবার্তায় বুঝতে পারেন, হারানো স্মৃতি ফিরতে শুরু করেছে।
সব জানার পরে সুমিত সাও দ্রুত স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানান এবং পুলিশ আরও খোঁজখবর নিয়ে মারকাচো থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। খবর পেয়েই মারকাচো থানার পুলিশ আবার মাহাতোর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এর পরে আর সময় লাগেনি এই অদ্ভুত ঘটনার যবনিকা পতন হতে। ৭ জানুয়ারি মারকাচো থানাতেই এক আবেগঘন পুনর্মিলনের সাক্ষী হয় সবাই। পরিবারের সদস্যরা বহু বছর পর তাঁদের হারিয়ে যাওয়া প্রকাশকে ফিরে পান। স্ত্রী গীতা দেবী এবং সন্তান সুজল (১৮) ও রানির (১৬) হাতে তাঁকে তুলে দেয় পুলিশ। এতদিন একা সন্তানদের বড় করা গীতা দেবী স্বামীকে ফিরে পেয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন।
এই গোটা পর্বের আরও অদ্ভুত বিষয় হলো, এই ঘটনার মাত্র ১০ দিন আগেই কলকাতা পৌর সংস্থা মাহাতোর অনুপস্থিতি সংক্রান্ত কিছু বকেয়া পরিশোধের চিঠি পাঠায় বাড়িতে। এর পরেই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রকাশের পরিবার তাঁকে মৃত বলে ধরে নিয়ে মৃত্যুর সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছিল। তবে কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকায় আবেদনটি তখনও মঞ্জুর হয়নি। তার মধ্যেই ফিরে এলেন নিখোঁজ মানুষটি।
তবে সব সুন্দর ভাবে শেষ হলেও মাহাতোর একটা কাজ বাকি থেকে গেছে। মহাকুম্ভ। খুব তাড়াতাড়িই সপরিবার মহাকুম্ভ মেলায় যাবেন তিনি। এই মহাকুম্ভই যে ঘরের পথ দেখিয়েছিল তাঁকে!