বৃহস্পতিবার আমদাবাদে টেক-অফ করার মিনিট খানেকের মধ্যে বিমানবন্দর লাগোয়া এক ডাক্তারি হস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান।
গ্রাফিক্স - দ্য ওয়াল
শেষ আপডেট: 14 June 2025 07:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাঁদের কাছে ১২ জুন অন্যান্য দিনের মতোই ছিল। আবার একটা ফ্লাইট, আবার একটা লং জার্নি। এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-এর (Air India Boeing Dreamliner 787-8) পাইলট, ক্রু সদস্যরা তাই রোজকারের মতোই তৈরি হয়েছিল লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু কে জানত, এটাই তাঁদের জীবনের শেষ ফ্লাইট জার্নি হতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার আমদাবাদে টেক-অফ করার মিনিট খানেকের মধ্যে বিমানবন্দর লাগোয়া এক ডাক্তারি হস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান (Ahmedabad Plane Crash)। মাত্র একজন যাত্রী ছাড়া বিমানের সকলের মৃত্যু হয়েছে। শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৪। আর এর সঙ্গে সঙ্গে বিমানের ক্রু-সদস্যদেরও জীবনের সব স্বপ্ন এক লহমায় শেষ হয়ে গেছে। ১২ জন সদস্যদের মধ্যে ৮ জনই ছিলেন মুম্বইয়ের বাসিন্দা।
ক্যাপ্টেন সুমিত সাব্রওয়াল
মুম্বইয়ের বাসিন্দা সুমিতের একার ফ্লাইং অভিজ্ঞতা ছিল ৮ হাজার ২০০ ঘণ্টার। তাঁর পরিবারের তরফে জানান হয়েছে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই তিনি জানিয়েছিলেন চাকরি ছেড়ে দেবেন। সুমিতের বাবার বয়স ৮২ বছর। তাঁর দেখভাল করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, বৃদ্ধ বাবার সেবাযত্ন করার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুমিত।
কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্দর
স্বপ্নের চাকরি ছিল। কয়েক বছর আগেই শুরু করেছিলেন নিজে উড়ান। এতদিনে ১ হাজার ১০০ ঘণ্টার ফ্লাইং অভিজ্ঞতা হয়ে গেছিল তাঁর। পরিবারের অনেকেই এই পেশায় ছিলেন। মা একসময়ে ক্রু সদস্য হিসেবে কাজও করেছেন। তাই উড়ান সম্পর্কে আগ্রহ ছোট থেকেই ছিল কুন্দরের। সেই ইচ্ছে থেকে পাইলট হয়েছিলেন ক্লাইভ। স্বপ্নের পেশায় জীবন কেড়ে নিল।
রোশনি সোনগারে
ছোটোবেলার স্বপ্ন ছিল ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হওয়ার। অত্যন্ত গরীব ঘরের মেয়ে ছিলেন রোশনি। বাবা ছিলেন একজন টেকনিশিয়ান, মা বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন অর্থ উপার্জন করতেন। পরিবার বলছে, যেদিন রোশনি বিমানের চাকরি পেল সেদিন দারুণ খুশি হয়েছিল। ভেবেছিল এবার মা-বাবার সব স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু তা অসম্পূর্ণ থেকে গেল।
এক সময়ে ছোট্ট এক কামরার ঘরে থাকা রোশনি সম্প্রতি ওয়ান বিএইচকে ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন। মাত্র ২ দিন আগে ধর্মীয় এক অনুষ্ঠানের জন্য নিজের বাড়ি গেছিলেন। পরের বছর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে ১২ জুন সবকিছুর ইতি হয়ে গেছে।
অপর্ণা মাহাধিক
৪০ বছর বয়সি এই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কাজের সূত্রেই এই বিমানে তাঁর আলাপ হয়েছিল স্বামী অনমোলের সঙ্গে। সেখান থেকে প্রেম, বিয়ে। ২০১৩ সালে দুজনের চার হাত এক হয়েছিল এবং তাঁদের ৮ বছরের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে।
মৈথেলী পাটিল
পানভেলের নভা গ্রামের বাসিন্দা মৈথেলী এলাকার প্রথম এয়ারহস্টেস। মাত্র ২ বছর আগে এই পেশায় এসেছিল সে এবং মাত্র ২ আগে আগে বিদেশের বিমানে তাঁর কাজ শুরু হয়েছিল। ৭৮৭-৮ ছিল তাঁর সপ্তম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট।
এঁদের মতোই ওই বিমানে ছিলেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট দীপক পাঠক, যিনি ১১ বছর ধরে এই পেশায় ছিলেন। কেবিন সুপারভাইজার শ্রদ্ধা ধওয়ান ২১ বছর ধরে এয়ার ইন্ডিয়ায় কাজ করছিলেন।
সকলের জীবনযুদ্ধের গল্প ভিন্ন ভিন্ন, তবে শেষটা এক হয়ে গেল...