পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদে মদত নিয়ে সাত সদস্যের সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলে নেই দেশের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর নাম।
তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেও প্রতিনিধির নাম চেয়ে আমন্ত্রণ জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার।
শেষ আপডেট: 17 May 2025 14:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদে মদত নিয়ে সাত সদস্যের সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলে নেই দেশের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর নাম। কংগ্রেসের প্রস্তাবিত নামের তালিকা উপেক্ষা করে শশী তারুরকে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিনিধিদলের নেতা করেছে বিজেপি সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেও প্রতিনিধির নাম চেয়ে আমন্ত্রণ জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূলের থেকে সাংসদ সংখ্যায় নগণ্য ডিএমকে, এনসিপি, জেডিইউ, শিন্ডেপন্থী শিবসেনার মতো দলকে প্রতিনিধিদলে স্থান দেওয়া হলেও বাদ দেওয়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে।
সাধারণত, এই ধরনের বৈদেশিক কূটনীতিক পদক্ষেপে বিরোধী দলনেতাকে পাঠানো একটি অলিখিত রীতি। কিন্তু, পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কূটনৈতিক রাজনীতির ময়দানে দেশীয় রাজনীতিতেও ফায়দা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল বিজেপি। রাহুল গান্ধীকে না নেওয়া তার অন্যতম পদক্ষেপ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইলেন মোদী-অমিত শাহ জুটি। প্রথমত, কেরলের তিরুবনন্তপুরমের এমপি শশী তারুরকে বাছাই করে কংগ্রেসের ভিতরে চিড় আরও চওড়া করে দিল শাসকদল। কারণ, কংগ্রেস যে চারজনের নামের তালিকা পাঠিয়েছে তাতে যেমন নেই লোকসভার বিরোধী দলনেতার নাম। তেমনই রাখা হয়নি বিদেশ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির প্রধান শশী তারুরকেও।
দ্বিতীয়ত, দলের অন্দরের খবর রাহুল গান্ধী সম্ভবত নিজেই এই প্রতিনিধিত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। কারণ, বিদেশের মাটিতে তাঁর বক্তব্য নিয়ে বিজেপি বাহিনী ফের ঔদ্ধত্যের রাজনীতি নিয়ে প্রসঙ্গ আগে বাড়াতে পারে। কেন্দ্র গতকাল, শুক্রবারই সব দলের কাছে প্রতিনিধির নাম প্রস্তাব চেয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু, তার মধ্যে ছিল না তৃণমূল কংগ্রেসের নাম। যদিও কংগ্রেসের রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, মল্লিকার্জুন খাড়্গে ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুলের কাছে চারজনের নাম চেয়ে পাঠায়।
কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে, ওইদিনই বিকেলের মধ্যে কংগ্রেস চারজনের নাম সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর কাছে পাঠিয়ে দেয়। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ শনিবার সকালে একটি এক্সবার্তায় লিখেছেন, যে চারজনের নাম দল পাঠিয়েছিল তাঁরা হলেন, আনন্দ শর্মা (প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী), গৌরব গগৈ (লোকসভার ডেপুটি বিরোধী নেতা), ডঃ সৈয়দ নাসির হুসেন (রাজ্যসভা সদস্য) ও রাজা ব্রার (লোকসভা সদস্য)।
দেখা যাচ্ছে তারুর বা রাহুল কারও নামই কংগ্রেসের ঘোষিত তালিকায় ছিল না। এবং কংগ্রেসের তালিকায় থাকা আনন্দ শর্মা বর্তমানে এমপি নন। তবে তিনি কংগ্রেসের দলীয় বিদেশ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান। আসলে মোদী সরকার চাইছিল না যে, রাহুল গান্ধী বিদেশে গিয়ে বেফাঁস কিছু বলে ফেলেন এবং তাঁর বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে কংগ্রেস বুক ফুলিয়ে কিছু বলে বেড়াতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে জঙ্গি মদত নিয়ে পাকিস্তানকে খোলা হাটে 'নাঙ্গা' করে তুলে ধরতে গোলটেবিল কূটনীতির আশ্রয় নিচ্ছে ভারত। আর এই অস্ত্রে ঘায়েল করতে সর্বদল সংসদীয় প্রতিনিধিদের বিদেশ সফরে পাঠানো হবে। পহলগাম সন্ত্রাস পরবর্তী প্রত্যাঘাতের যুক্তি ও পাকিস্তান সরকার ও সেদেশের সেনাবাহিনী যে লস্কর-ই-তোইবা ও জইশ-ই-মহম্মদের মতো আন্তর্জাতিক খাতায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে তা তুলে ধরবেন প্রতিনিধিরা।
শনিবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সাতজন সাংসদের নাম জানানো হয়েছে। যাঁরা বিদেশের মাটিতে দাঁড়়িয়ে পাকিস্তানি মিথ্যাভাষণ, অপপ্রচার, জঙ্গিদের আশ্রয় ও মদতদান, ভারত বিরোধী চক্রান্ত, সরকারি সেনা ও চর সংস্থার প্রত্যক্ষ সাহায্যে ভারতের মাটিতে জঙ্গি হামলা ও তার পরবর্তী নয়াদিল্লির প্রত্যাঘাত নিয়ে সত্য তথ্যনির্ভর কথা জানাবেন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে।
এদিন সংসদীয় বিষয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এক এক্সবার্তায় জানান, সাত সদস্যের সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা শীঘ্রই ভারতের মূল শরিক দেশগুলিতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনও রেয়াত নয়, এই কথাই তুলে ধরবেন। দলমতনির্বিশেষে এক শক্তিশালী জাতীয় ঐক্যের নজির হিসেবে গড়ে উঠবে এই পদক্ষেপ।
যে সাতজনকে এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপের অংশীদার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন-
Yesterday morning, the Minister of Parliamentary Affairs Kiren Rijiju spoke with the Congress President and the Leader of the Opposition in the Lok Sabha. The INC was asked to submit names of 4 MPs for the delegations to be sent abroad to explain India's stance on terrorism from…
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) May 17, 2025
১। শশী তারুর (কংগ্রেস)
২। রবিশঙ্কর প্রসাদ (বিজেপি)
৩। সঞ্জয়কুমার ঝা (জেডিইউ)
৪। বৈজয়ন্ত পান্ডা (বিজেপি)
৫। কানিমোঝি করুণানিধি (ডিএমকে)
৬। সুপ্রিয়া সুলে (এনসিপি-পাওয়ার)
৭। শ্রীকান্ত একনাথ শিন্ডে (শিবসেনা)
কে কোথায় যাচ্ছেন?
সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপ্রিয়া সুলে নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা এ মিশরে। বৈজয়ন্ত পান্ডার নেতৃত্বাধীন দল যাবে পশ্চিম ইউরোপে। শ্রীকান্ত শিন্ডের দল যাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও আফ্রিকায়। শশী তারুর যাবেন আমেরিকা সফরে। অন্যদিকে, জেডিইউয়ের সঞ্জয় ঝা যাবেন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায়। এবং রবিশঙ্কর প্রসাদের দল যাবে আরব দুনিয়ার দেশগুলিতে। কানিমোঝির প্রতিনিধিদল যাচ্ছে রাশিয়া ও স্পেনে। শশী তারুর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, আমি নিজেকে সম্মানিত ও গর্বিত বোধ করছি।