Advertisement
সংগৃহীত ছবি
Advertisement
শেষ আপডেট: 20 April 2025 13:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উচ্চতর আদালতে আপিল করার কোনও অধিকার দেওয়া হয়নি কুলভূষণকে—স্বীকার করে নিল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। গুপ্তচরবত্তির অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণ যাদব পাকিস্তানের জেলে বন্দি। তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের (ICJ)২০১৯ সালের রায়ের পরে কেবল কনসুলার অ্যাক্সেস পান। সেই রায় তাঁকে পাকিস্তানে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগই দেয়নি।
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে একটি সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে এই বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী। বৃহস্পতিবার এক মামলার শুনানির সময় এই বক্তব্য উঠে আসে, যেখানে ২০২৩ সালের ৯ মে ইমরান খানের গ্রেফতারিকে ঘিরে হওয়া দাঙ্গায় অভিযুক্ত পাকিস্তানি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতের সাজা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা জানতে চান, যাদবের ক্ষেত্রে যেহেতু সামরিক আদালতের রায় পর্যালোচনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তাহলে পাকিস্তানি নাগরিকদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না কেন?
এর জবাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কুলভূষণ যাদবের মামলায় পাকিস্তান ভিয়েনা কনভেনশন অন কনসুলার রিলেশনস-এর ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছিল। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যেকোনও দেশের নাগরিক বিদেশে গ্রেফতার হলে সংশ্লিষ্ট দেশের কনসুলেট অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগের অধিকার তাঁর থাকে।
আন্তর্জাতিক আদালত পাকিস্তানকে এই লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করে এবং রায় দেয় যে, যাদবকে কনসুলার অ্যাক্সেস দিতে হবে এবং তাঁকে একটি সুবিচারপ্রাপ্ত মামলার সুযোগ করে দিতে হবে। পরে পাকিস্তান সরকার আইনি সংশোধন আনতে বাধ্য হয়, যাতে সামরিক আদালতের রায় পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি হয়—এটা মূলত ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার অংশ হিসেবে করা হয়।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের বালোচিস্তান থেকে যাদবকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অভিযোগ ছিল, তিনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW)-এর এজেন্ট এবং বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কাজ করছিলেন। পাকিস্তান একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে যাদবকে RAW-এর হয়ে কাজ করার কথা স্বীকার করতে দেখা যায়।
তবে ভারত এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে জানায়, যাদব ব্যবসায়িক কারণে ইরানে ছিলেন এবং সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। যাদবের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ভারত আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। ICJ বা বিশ্ব আদালত পাকিস্তানকে নির্দেশ দেয় মৃত্যুদণ্ড আপাতত কার্যকর না করতে।
আন্তর্জাতিক আদালত স্পষ্ট জানায়, পাকিস্তান যাদবকে কনসুলার অ্যাক্সেস দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
রায়ে বলা হয়েছিল, 'পাকিস্তান কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ, তাঁকে জেলে দেখে আসা এবং তাঁর আইনি প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করার ভারতীয় অধিকারে বাধা দিয়েছে, যা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।'
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে সাম্প্রতিক মামলায় উঠে এসেছে, কীভাবে দেশের নিজস্ব নাগরিকদের সামরিক আদালতের বিচারের পরে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। অথচ আন্তর্জাতিক চাপের কারণে যাদবের ক্ষেত্রে এই সুযোগ তৈরি হয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরেও সামরিক আদালতের ভূমিকা, স্বচ্ছতা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই মামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান সরকারের স্বীকারোক্তি, একদিকে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া মেনে যাদবকে কিছু সুযোগ দেওয়া হলেও, অন্যদিকে দেশের নাগরিকেরা একই অধিকার পাচ্ছেন না, এই দ্বৈত নীতি নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হচ্ছে বর্তমানে।
Advertisement
Advertisement