বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার ডিজিটাল অ্যারেস্টের কিংপিন চিরাগ কাপুর।
শেষ আপডেট: 10th January 2025 11:22
যৌথ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও ট্রাফিক) রূপেশ কুমারের মতে, গত বছরের ১৭ জুন সাইবার ক্রাইম থানায় এই অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগকারী দেবাশি দত্ত দাবি করেন, তাঁকে ভয় দেখিয়ে এবং প্রতারণার মাধ্যমে ৪৭ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছিল যে তাঁর নথি ও ব্যক্তিগত তথ্য মাদক পাচার এবং অর্থ পাচারের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হয় এবং তাঁকে জানানো হয় যে তিনি 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' হয়ে রয়েছেন।
দেবাশি জানিয়েছেন, প্রতারকরা তাঁকে ভয় দেখিয়ে বলেছিল যে তাঁর বাড়ি এবং পরিবারের উপর অভিযান চালানো হবে। তাঁকে ২৪ ঘণ্টা জুম সংযোগ চালু রাখতে বলা হয়েছিল এবং প্রতিটি কার্যক্রম নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। এই ভয় ও চাপ সৃষ্টি করে প্রতারকরা তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করায়।
অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্তে নেমে, পুলিশ ৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার একটি লেনদেনের সন্ধান পায়, যা দেবাশি ১২ জুন একটি অ্যাকাউন্টে জমা করেছিলেন। এই অ্যাকাউন্টটি ব্রেন বার্স্ট রোবোটিকস নামক একটি ভুয়ো প্রতিষ্ঠানের নামে ছিল। সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে কলকাতার আনন্দপুর, পাটুলি এবং নরেন্দ্রপুর এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালানো হয় এই সূত্র ধরে। একটি অস্থায়ী অফিসের খোঁজ মেলে, যেখানে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি ও বিক্রির কাজ চলত। এই অভিযানে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।
সেই সঙ্গে পুলিশ সেখানে থেকে উদ্ধার করেছে, ১০৪টি পাসবুক ও চেকবুক, ৬১টি মোবাইল ফোন, ৩৩টি ডেবিট কার্ড, ২টি কিউআর কোড মেশিন, ১৪০টি সিম কার্ড, ৪০টি সিল, ১০টি ভাড়ার চুক্তিপত্র ইত্যাদি।
গ্রেফতার হওয়া লোকজনকে জেরা করে এবং সেইসমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে খোঁজ মেলে এই চক্রের কিংপিন চিরাগ কাপুরের। তাঁকে এই অপরাধচক্রের 'সিইও' হিসবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তিনিই বিভিন্ন এজেন্টদের মাধ্যমে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করতেন এবং নজরদারি এড়িয়ে জাল বিছোতেন পরবর্তী শিকারের।
এর আগেই অক্টোবরের ২৬ তারিখে দিল্লিতে চিরাগের এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বিক্রির কাজে যুক্ত ছিলেন। তবে চিরাগ কাপুর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।
শেষমেশ বৃহস্পতিবার ভোরে সফল হয় পুলিশি তদন্ত। চিরাগ কাপুরকে গ্রেফতার করার পরে তাঁর কাছ থেকে যে সমস্ত জিনিস উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি হল, রাউটার, হার্ড ডিস্ক, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, প্যান কার্ড, চেকবুক, বিভিন্ন কোম্পানির নামে রাবার স্ট্যাম্প ইত্যাদি।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ, শুক্রবার চিরাগ কাপুর-সহ ধৃতদের আদালতে পেশ করা হবে এবং চিরাগ কাপুরের ট্রানজিট হেফাজতের আবেদনও জানানো হবে।