কলকাতা-কোচবিহার ট্রেন
শেষ আপডেট: 29 June 2024 13:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতা থেকে রওনা হয়ে নদিয়ার গেদে। সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা-ঈশ্বরদী-নাটোর-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর-নীলফোমারি-চিলাহাটি হয়ে ভারতের কোচবিহার। এই পথ ধরে চলবে ভারতীয় রেল, যে পথের দু-প্রান্তে ভারত। মাঝের দীর্ঘপথ বাংলাদেশের। আগামী মাসে এই পথ ধরে প্রথমে চলবে একটি খালি মালগাড়ি। এইভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে নিয়মিত যাতায়াত করবে পণ্যবাহী রেল বা মালগাড়ি। তারপর যাত্রী ট্রেন যাতায়াতের কথাও বিবেচনায় আছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য অনুষ্ঠিত ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে রেল নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে তার অন্যতম হল এই রেলপথ। ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা চুক্তি সম্পাদনের পর জানান, জুলাই মাসেই এই নয়া রেল পথে ভারতের ট্রেন চলবে।
হাসিনা সফর শেষ করে ঢাকা ফেরার আগেই এই নয়া রেল চুক্তি নিয়ে সে দেশের বিরোধী দলগুলি সরব হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বক্তব্য, হাসিনা সরকার ভারতের হাতে দেশের রেল ট্রানজিট তুলে দিচ্ছে। এটা দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়ার শামিল। শেখ হাসিনাও পাল্টা বলেছেন, অতীতে যে রেলপথগুলি চালু ছিল সেগুলিই ভারতের জন্য উম্মুক্ত করা হচ্ছে। বিনিময়ে বাংলাদেশে বিপুল টাকা রাজস্ব অর্জন করবে। বাংলাদেশের রেলেরও উন্নতি হবে।
বিরোধীরা অবশ্য সরকারের বক্তব্যে নারাজ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তাঁর দল বিএনপি শনিবার থেকে লাগাতার আন্দোলনে নামছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে ভারতের সঙ্গে সদ্য স্বাক্ষরিত রেল চুক্তিটির বিরোধিতাও আছে।
এখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পাঁচটি রেল রুট চালু আছে। এর তিনটি যাত্রী এবং দুটি মালগাড়ির রুট। এই রুটগুলিতে ট্রেন ক্রস ইন্টারচেঞ্জ পদ্ধতিতে চলে। দুই দেশের চালক ও গার্ডরা তাঁদের দেশের ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনটি সীমান্তে পৌঁছে দেন। পরে যে যাঁর দেশের ইঞ্জিন ও ড্রাইভার-গার্ড দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেন। নয়া ব্যবস্থায় ইঞ্জিন বদল এবং গার্ড-ড্রাইভার পরিবর্তন হবে না। এতে সময় ও খরচ কমবে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের কাছ থেকে এই সুবিধা দাবি করছিল। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে গেলে কলকাতা-কোচবিহার যাতায়াতে কম সময় লাগবে। খরচও কম হবে। এরফলে ভুটানও উপকৃত হবে। কোচবিহার থেকে ট্রেন অদূরে ভুটান সীমান্তের ডালগাঁও পর্যন্ত যাবে। হাসিনার গত সফরেই কলকাতা-রাজশাহী ট্রেন এবং কলকাতা-চট্টগ্রাম বাস সার্ভিস চালুরও সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলির আপত্তি রেল ট্রানজিট দেওয়া নিয়ে। হাসিনার বক্তব্য, আমি শেখ মুজিবুরের মেয়ে। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কোনও চুক্তি করিনি। গোটা বিশ্ব এখন নিজেদের দুয়ার খুলে দিচ্ছে। যে রেল পথ নিয়ে চুক্তি হয়েছে, দেশভাগের আগে সেই রুটে ট্রেন চলত। সেই রুটেই ট্রেন চালানোর কথা হয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতীয় রেলের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করবে। আধুনিক হবে ভারতীয় রেল।
ভারত বিগত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, কলকাতা বন্দর ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। একইভাবে বাংলাদেশের নদী পথে চলছে ভারতের পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজ। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সহজেই ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সমতল থেকে ভারতের পাহাড়ি পথের পরিবর্তে বাংলাদেশের নদী দিয়ে দ্রুত এবং কম খরচে পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে।