রাজ্যের অর্থনীতির ফুসফুস পর্যটন ব্যবসা অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে।
শেষ আপডেট: 2 May 2025 11:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একটা জঙ্গিহানা পুরোদমে চলা পর্যটন মরশুমের কফিনে পেরেক ঠুকে দিল। অনন্তনাগ জেলার পহলগাম সহ প্রায় অর্ধ শতাধিক পর্যটন কেন্দ্র সরকারি নির্দেশে বন্ধ। ২২ এপ্রিল ওই ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধের স্নায়ুর লড়াই চলতে থাকায় নতুন করে পর্যটকরাও আর আসছেন না। অনেক বিদেশি সরকার আপাতত জম্মু-কাশ্মীর ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের অর্থনীতির ফুসফুস পর্যটন ব্যবসা অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে।
তাই এখন পর্যটন ব্যবসাকে কোমার হাত থেকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছেন ব্যবসায়ীরা। অনন্তনাগ জেলার হোটেল অ্যাসোসিয়েশন, পনি অপারেটর এবং ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলিতভাবে এক বৈঠকে লোকসানে চলা পর্যটন ব্যবসাকে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে। যার মধ্যে প্রথমটিই ভ্রমণার্থীদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস জাগিয়ে তোলা।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বলা হয়েছে, আমাদের প্রাথমিক উৎকণ্ঠার বিষয় অর্থনৈতিক প্রভাব নয়। জঙ্গিরা যেহেতু ধর্ম বেছে মেরেছে, তাই প্রথম ও মৌলিক কর্তব্য হল অ-কাশ্মীরিদের মধ্যে বিশ্বাস জাগানো যে, এই ভূস্বর্গ তাঁদের পক্ষে নিরাপদ। পহলগাম হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুস্তাক পহলগামি বলেন, কাশ্মীর পর্যটকদের মধ্যে নিরাপত্তা আস্থা গড়ে তুলতে আমাদের কয়েক দশক লেগে গিয়েছে। এখন আবার সেই ভরসা ফিরিয়ে আনতে কত সময় লেগে যাবে তা আমরা বুঝতে পারছি না।
তাঁর মতে, এই জঙ্গি হানা আমাদের মুখে কলঙ্কের কালি লেপে দিয়েছে। পুরোদস্তুর পর্যটন মরশুমের ক্ষতি পূরণ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যৌথ কমিটি। যেমন হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগের রুম ভাড়ায় ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। একইভাবে রেস্তরাঁ মালিকরা জানিয়েছেন, সব খাবারে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট মিলবে। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে রোজই বিকেলে মোমবাতি মিছিল করা হচ্ছে। সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, জঙ্গি হানায় নিহতদের ক্ষতিপূরণ তো সম্ভব নয়, সে কারণে আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৫০টি হোটেল এবং রিসর্ট মালিক ছাড়াও স্থানীয় পনি অপারেটর ও ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন। সকলেই নিজস্ব পুঁজি মতো ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন। ১ মে থেকেই এই ছাড় লাগু করা হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজাদ গুলজার বলেন, এই ছাড় দিয়ে জীবনহানির কোনও ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়, তা আমরা জানি। কিন্তু, এটাকে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা বলে ধরে নিতে পারেন। শহিদদের প্রতি আমাদের সমবেদনা ও গভীর শোকের বহিঃপ্রকাশ বলতে পারেন।
এই চিত্র শুধু বিচ্ছিন্নভাবে অনন্তনাগ জেলায় নয়। ডাল লেকের ধারে দাঁড়ানো চাটওয়ালা থেকে কাশ্মীরের সব হোটেলেই এখন বিরাট ডিসকাউন্ট মিলছে। এমনকী লালচকের দোকান, রেস্তরাঁগুলিও সংহতি প্রকাশের অঙ্গ হিসেবে বিশাল ছাড় ঘোষণা করে বাইরে প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে রেখেছে। কাশ্মীরি শিকারায় ফল বিক্রেতার একটি ভিডিও তো ভাইরাল হয়েই গিয়েছে। যেখানে তিনি পর্যটকদের জন্য বিনা পয়সায় ফ্রুট স্যালাড দেওয়ার অফার দিয়েছেন।
এই জঙ্গি হানার পর কাশ্মীরে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবার সাধারণ কাশ্মীরিরা রাস্তায় বেরিয়ে শান্তি মিছিল করে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী স্লোগান দিয়েছেন। এবং একদিনের ব্যবসা বনধ পালন করেছেন। পিডিপির বিধায়ক ওয়াহিদ উর রহমান পারা বলেন, এই জঙ্গি হানা ধর্মীয় আক্রোশের অঙ্গ। তাই আমাদের কাছে পর্যটন ব্যবসাটা অগ্রাধিকার নয়, পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়াই প্রাথমিক দায়িত্ব।
পহলগামের অন্যতম সৌন্দর্যের আকর্ষণ লিডার নদী। পাইনে ঢাকা পাহাড়ের বাধা কেটে কেটে তরতরিয়ে নেমে এসেছে লিডার। প্রায় ৩০ কিমি দীর্ঘ এই নদীর তীরে রয়েছে অসংখ্য হোটেল ও গেস্ট হাউস। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ২২ এপ্রিল জঙ্গি হানার আগে পহলগামে ১০ হাজার হোটেল রুম বুক করা ছিল। এখন মেরেকেটে ১০০০ ঘর বুকড রয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক বলেন, এঁদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন গুজরাতি, বাঙালি ও দক্ষিণ ভারতীয়।
তাঁর কথায়, আসলে আমরা এখন টাকা রোজগারের ধান্দায় নেই, যে বিশ্বাস জঙ্গিরা ছিনিয়ে নিয়েছে, তা আবার ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য। সেদিন যা হয়েছে, তার কাছে এই ডিসকাউন্ট কিছুই নয়। আমাদের সংগঠনের আওতায় ১৪০টি হোটেল রয়েছে। তারা সবাই ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এমনকী ফ্রিতে থাকতে চাইলে, সে অফারও রয়েছে। আমরা শুধু চাই পর্যটকরা আবার ভরসা করে ফিরে আসুন।