শেষ আপডেট: 6th December 2024 13:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কর্নাটকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির বিরাট কেলেঙ্কারি নিয়ে শোরগোল বেধেছে। আসন ধরে রাখা কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই বেঙ্গালুরু থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হলেও এই দুর্নীতির পিছনে আরও বড় বড় চাঁইরা রয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। তাদের কয়েকজনের খোঁজ চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, কম খরচে সরকারি কলেজে ভর্তির আসন ব্লক করে রেখে, বেসরকারি কলেজগুলিতে লক্ষ লক্ষ টাকায় ভর্তির একটা বিরাট চক্র রয়েছে। বেঙ্গালুরু শহরের পুলিশ কমিশনার বি দয়ানন্দ জানান, মূল পান্ডা আরও ৩ জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
কর্নাটকের বেসরকারি কলেজগুলির ৪৫ শতাংশ আসনে 'সরকারি আসন কোটা'য় ভর্তির নিয়ম। যেখানে পড়ার বার্ষিক খরচ সর্বোচ্চ ৭৬,১৩৫ টাকা। অন্য ৫৫ শতাংশ আসনে কলেজগুলি নিজের ইচ্ছামতো বেতন কাঠামো ঠিক করতে পারে। কর্নাটক কমন এন্ট্রান্স টেস্ট বা চলতি কথায় KCET পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এই ভর্তি নেওয়া হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং, বি-ফার্মা (BPharma), ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি (Dpharma) পাঠ্যক্রমে ভর্তিতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে এই পরীক্ষা দেন।
পরীক্ষার্থীরা সরকারি কোটায় ভর্তির জন্য তিনটি কলেজ বাছাই করতে পারেন। ভর্তি প্রক্রিয়ার শেষে একজন ছাত্র একটি কলেজে ভর্তি হন, তখন অন্য দুটি আসনকে বেসরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্টের হাতে ছেড়ে দেওয়াই নিয়ম। তখন সেই কলেজ কর্তৃপক্ষ বিরাট দাঁও মেরে সেখানে ভর্তি করে নেয়। এটাই কর্নাটক সরকার এবং বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির মধ্যে সমঝোতাপত্রে সই করা চুক্তি।
এখানে উল্লেখ করা যায়, সরকারি পোষিত কোর্সে পড়তে যেখানে সর্বোচ্চ ৭৬ হাজার টাকা লাগে, সেখানে ম্যানেজমেন্ট নির্ধারিত একই কোর্সে পড়তে ৩০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি গুনাগার দিতে হয় পড়ুয়াকে। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, অভিযুক্তরা কিছু সরকারি কোটার আসন ব্লক করে রেখে দিত, যাতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ইচ্ছুক পড়ুয়ারা বাধ্য হতেন বেসরকারি বেতন কাঠামোয় পড়াশোনা করতে।
কেলেঙ্কারি ফাঁস হল কীভাবে?
এ বছরের কাউন্সেলিংয়ের শেষে কর্নাটক সরকার জানতে পারে ২৬২৫ জন পড়ুয়া তাঁদের পছন্দের আসনে ভর্তি হতে পারেননি। কর্নাটক পরীক্ষা নিয়ামক কমিটি তাদের নোটিস পাঠালে জবাবে জানতে পারে এই আসন ব্লক করে রাখার ঘটনা। তাঁদের কেউ বিএসসি, কেউ মেডিক্যাল কলেজে এবং কেউ আইআইটিতে চলে গিয়েছেন। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর হিসাব মতো রাজ্যের বেশ কিছু কলেজে বহু আসন শেষমেশ সরকারি কোটায় খালি পড়েছিল। তখনই টনক নড়ে প্রশাসনের।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে পড়ুয়াদের আইপি অ্যাড্রেস, একই মোবাইল নম্বর কপি করা হয়েছিল গোয়া এবং অন্যান্য কয়েকটি এলাকা থেকে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক প্রয়োগ করে। পুলিশ প্রথমে কেইএ ভবন থেকেই তদন্ত শুরু করে। কারণ পুলিশ জানত যে, অন্দরের কেউ ছাড়া এই দুর্নীতি সম্ভব নয়। তখনই ডেটা সংক্রান্ত কাজ করেন এমন একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ জানতে পায় তিনি বেসরকারি কয়েকজনকে তা শেয়ার করেছেন।
এই ব্যক্তি পরীক্ষা দেওয়া কিন্তু কাউন্সেলিংয়ে হাজির না হওয়া পরীক্ষার্থীদের লগইন পাশওয়ার্ড সহ অন্যান্য তথ্য দালালদের সরবরাহ করতেন। এই দালালরাই তখন কিছু আসন ব্লক করে ফেলতেন অনলাইনে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ২-৩ লাখ টাকার বিনিময়ে সরকারি কোটার এক-একটি আসন ধরে রাখা হতো। যে আসনে ভর্তি হওয়ার প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যেত না। এই কাজের জন্য চক্রটি তুলনামূলকভাবে ধনী বাবা-মায়ের সন্তানদের খোঁজ করত। যাঁরা ছেলেমেয়েকে সামাজিক সম্মানের লোভে প্রচুর খরচ করে পড়াতে পিছপা হওয়ার নয়। তখন এই আসনগুলিই ২০-৪০ লাখ টাকায় প্রতিবছর বেচে দেওয়া হতো। দালালরাই অভিভাবকদের নিয়ে আসত এবং নিজের কমিশন পকেটে পুরত।