শেষ আপডেট: 10th March 2025 17:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোনা পাচারের অভিযোগে ধৃত কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাওকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে গত সোমবার সোনা পাচারের অভিযোগে হর্ষবর্ধিনী রানিয়াকে গ্রেফতার করে ডিরেক্টরেট অফ রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স। প্রথমে জেল হেফাজত ও পরে ডিআরআইয়ের আর্জিতে তাঁকে তিনদিনের তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে দেওয়া হয়। তার মেয়াদ শেষে এদিন ফের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আর্থিক বিষয়ক অপরাধের বিশেষ আদালত।
এদিন আদালতে রানিয়া রাও কান্নাকাটি করেন। বিচারকের সামনে কেঁদেকেটে তিনি জানান, ডিআরআই হেফাজতে তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ না করা হলেও মানসিক নির্যাতন ও হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো হয়েছে। যার ফলে তিনি আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। এর আগে ডিআরআই গ্রেফতার করার পরেই রানিয়ার একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে। যাতে দেখা যায়, তাঁর চোখের তলায় কালশিটে পড়ে ফুলে গিয়েছে। তাতে মনে করা হয়েছিল, অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারধর করা হয়ে থাকতে পারে।
কিন্তু, পরেই নিজের বয়ানে রানিয়া জানিয়েছিলেন দুবাই যাওয়ার আগেই এই দাগ ছিল। তাঁকে তদন্তকারী অফিসাররা মারধর করেননি। এদিনও আদালতে তিনি জানান, তাঁকে ভয় দেখানো ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হলেও কেউ মারধর করেনি। তিনি আরও বলেন, তাঁকে মৌখিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে পদে পদে। তিনি আর ডিআরআই হেফাজতে থাকতে আতঙ্কিত বোধ করছেন। তাঁকে যেন তাদের হেফাজতে না রাখা হয়।
সোনা পাচারে ধৃত জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাওকে নিয়ে এবার বিজেপি-কংগ্রেসে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের অভিযোগ, বিজেপির আমলেই ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন হর্ষবর্ধিনী রানিয়া ওরফে রানিয়া রাও। অভিনেত্রীর একটি সংস্থাকে বিজেপি সরকার একসময় বিশাল পরিমাণ শিল্পজমি অনুমোদন করেছিল। যেখানে আজ পর্যন্ত কিছুই গড়ে ওঠেনি। কেন তাঁকে ও তাঁর ভাইয়ের নামে গড়ে তোলা ওই সংস্থাকে ওই বিপুল পরিমাণ জমি তুলে দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে এখন জলঘোলা চলছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।
কর্নাটক শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন বোর্ড (KIADB) জানিয়েছে, রানিয়াকে একটি ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার জন্য আগের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার জমি দিয়েছিল। বোর্ড আরও জানিয়েছে, কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ওই অনুমোদন হয়। বোর্ডের এই প্রত্যুত্তরের কারণ হল, সোনা পাচারের অভিযোগে ডিরেক্টরেট অফ রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স ও সিবিআই একযোগে মামলা করায় জমি অনুমোদনের বিষয়টি সামনে আসে। কর্নাটক শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ওই জমির অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু, সেটা পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে হয়েছিল বলে ব্যাখ্যা দিল বর্তমান বোর্ড।
রাজ্যের বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী এমবি পাটিলের দফতর একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সালের একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ক্ষিরোদা ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে সরকার ১২ একর জমি দান করে। তুমাকুরু জেলার সিরসা শিল্পাঞ্চলে এই জমি দেওয়া হয়েছিল। এই কোম্পানির মালিক ছিলেন রানিয়া ও তাঁর ভাই। আর কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের পর। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই জমিতে টিএমটি বার, রড ও অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদনের জন্য কারখানার গড়ার প্রস্তাব ছিল। যে কারখানায় রানিয়ারা প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জমি আদায় করেছিলেন।
পর্ষদের সিইও মহেশ জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি রাজ্যের ১৩৭-তম রাজ্যস্তরীয় সিঙ্গল উইনডো ক্লিয়ারেন্স কমিটি ওই জমির ছাড়পত্র দেয়। কোম্পানি ওই জমিতে টিএমটি বার, রড তৈরির কারখানা গড়ার প্রস্তাব দিয়ে জমি আদায় করে। যাতে প্রকল্প ব্যয় ১৩৮ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। আপাতত ডিআরআই হেফাজতে থাকা রানিয়া জিজ্ঞাসাবাদের মুখে থাকলেও তাঁকে কেন্দ্র করে বাইরের রাজনীতিতে ঘূর্ণি শুরু হয়েছে। বিজেপির তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
উল্টোদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিওয়াই বিজয়েন্দ্রের অভিযোগ, দেশের ইতিহাসে এই মামলাটি বিরলতম মামলাগুলির একটি। রানিয়া রাও একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারের কন্যা। এই সত্যকে দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যেতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদি এই ঘটনার পিছনে কোনও মন্ত্রীর হাত থাকে তা একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীরই জানার কথা। জমি অনুমোদনের ব্যাপারে বিজেপি নেতা ভারত শেঠি বলেন, এই বিষয়টিও সিবিআই তদন্ত করে দেখবে। কংগ্রেস বলে বেড়াচ্ছে যে, জমি দেওয়া হয়েছিল বিজেপির আমলে। তদন্তে এর সত্যমিথ্যা ফাঁস হয়ে যাবে।