গোয়েন্দা সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরেই তার ওপর নজরে রেখেছিল। এখন তার অন্যান্য ভারতীয় যোগাযোগ সূত্রগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ছবি সৌজন্যে- জ্যোতি মালহোত্রা (সোশ্যাল মিডিয়া)
শেষ আপডেট: 19 May 2025 14:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা ‘অ্যাসেট’ হিসেবে গড়ে তুলছিল বলে দাবি করল পুলিশ। রবিবার হিসারে সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য জানান হরিয়ানার হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান।
৩৩ বছর বয়সি জ্যোতি (ইউটিউব চ্যানেলের নাম Travel with JO)-কে শুক্রবার হরিয়ানার নিউ অগ্রসেইন এক্সটেনশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার আদালতে পেশের পর পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির (বর্তমানে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, এপ্রিলের ২২ তারিখ জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষ চলাকালীন পাকিস্তানি হাই কমিশনে নিযুক্ত এক পাকিস্তানি গোয়েন্দা আধিকারিকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল জ্যোতির।
পুলিশ সুপার সাওয়ান বলেন, 'মালহোত্রা সরাসরি সেনা বা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কোনও গোপন তথ্যের নাগাল না পেলেও সে পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স অফিসারদের (PIOs) সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছিল। তাকে যে একটি অ্যাসেট হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল, তা স্পষ্ট।'
তিনি আরও বলেন, 'এটা যুদ্ধেরই একটা নতুন রূপ—সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার করে শত্রু রাষ্ট্র নিজেদের মতবাদ ছড়াতে চায়। মালহোত্রা শুধু নিজেই নয়, আরও কয়েকজন ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গেও যুক্ত ছিল, যারা পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সংস্পর্শে এসেছে।'
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জ্যোতির আর্থিক লেনদেন, ঘোরাফেরা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তার ল্যাপটপ এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ফরেনসিক পরীক্ষা হবে। জানা গিয়েছে, সে পাকিস্তানে বহুবার গিয়েছে এবং একবার চিনেও সফর করেছে।
একাধিক ভিডিওতে তাকে পাকিস্তানি হাই কমিশনে যেতে দেখা গিয়েছে। ২০২৩ সালে হাই কমিশনে ভিসার আবেদন করতে গিয়েই তার পরিচয় হয় পাক আধিকারিক এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে। পরবর্তীতে দানিশের মাধ্যমে পরিচয় হয় আলি আহওয়ানের সঙ্গে, যে পাকিস্তানে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল।
এফআইআর অনুযায়ী, আলি আহওয়ান তাকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে সে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। পুলিশের দাবি, সে স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ারও করেছে আগে।
অভিযোগ আরও রয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুরীর এক মহিলা ইউটিউবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সে ওড়িশাতেও গিয়েছিল। ওই ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গেও সে পাকিস্তান সংযোগযুক্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেছে বলে সন্দেহ। এছাড়া জ্যোতি কাশ্মীরে পহেলগামের হামলার আগেই সেখানে গিয়েছিল এবং তার আগে পাকিস্তানে ছিল। এসেছিল কলকাতাতেও। এই সফরগুলোর মধ্যে কোনও সংযোগ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, জ্যোতির পাকিস্তান ট্রিপ সম্ভবত 'স্পনসরড' ছিল। এমনকি সে চিনে যাওয়ার ভিসাও চেয়েছিল বলে তার এক ভিডিওতে দেখা গেছে। পাকিস্তানে গিয়ে সে কয়েকজন ‘হাই প্রোফাইল’ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানে ঠিক কী কথা হয়, কী কারণে ওই সাক্ষাৎ, সবটাই রয়েছে তদন্তকারীদের স্ক্যানারে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরেই তার ওপর নজরে রেখেছিল। এখন তার অন্যান্য ভারতীয় যোগাযোগ সূত্রগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ১৩ মে ভারত সরকার পাকিস্তানের এক গোয়েন্দা আধিকারিককে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে দেশছাড়া করে। তারপরই ১৭ মে গ্রেফতার করা হয় জ্যোতি মালহোত্রাকে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি হরিয়ানা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ে এই জটিল তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।