শেষ আপডেট: 5th November 2024 16:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেশের প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসরের আগে হাতে আর মাত্র তিনটি দিন বাকি আছে ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের। সেই বিদায়ের ঠিক প্রাক মুহূর্তে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের দুই সহ বিচারপতির পরোক্ষ সমালোচনার মুখে পড়তে হল প্রধান বিচারপতিকে। এদিন একটি মামলার রায় লেখার ক্ষেত্রে প্রয়াত বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ার সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় যে মন্তব্য লিখেছেন, তাতে প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন তাঁরই দুই সহ বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং সুধাংশু ঢুলিয়া।
সংবিধানের ৩৯বি ধারা নিয়ে একটি মামলায় চন্দ্রচূড় প্রয়াত বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ার সম্পর্কে লিখেছেন, তাঁর পূর্বতন রায় সংবিধানের বিস্তৃত ও নমনীয় চেতনার ক্ষতি করেছে। বিচারপতি নাগরত্ন এ বিষয়ে সিজেআই চন্দ্রচূড়ের মন্তব্যকে অনভিপ্রেত এবং অযৌক্তিক এবং বিচারপতি ঢুলিয়া প্রাক্তনী আয়ারের সমালোচনাকে কঠোর ও এড়িয়ে যাওয়া যেত বলে বর্ণনা করেছেন।
এদিন সাংবিধানিক বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় লেখার সময় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় প্রয়াত বিচারপতি ভিআর কৃষ্ণ আয়ারের কর্নাটক রাজ্য বনাম রঙ্গনাথ রেড্ডি মামলায় (১৯৭৮) পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হননি। এ নিয়ে বিচারপতি নাগরত্ন প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেন। কারণ চন্দ্রচূড় প্রয়াত বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ার এবং চিনাপ্পা রেড্ডিকে (আরেক বিচারপতি) নির্দিষ্ট আর্থিক আদর্শবাদের দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করেছেন।
প্রসঙ্গত এখানে বলা যায়, বিচারপতি ভিআর কৃষ্ণ আয়ার ছিলেন এদেশে বিচার আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ। রাজনীতিক এবং রাজ্যস্তরের মন্ত্রী আয়ার গরিব মানুষের জন্য আইনি পরামর্শ দানের সূচনাকারীদের একজন ছিলেন। মানবাধিকার-সমাজকর্মী, আইনজীবী হিসেবে তাঁকে জেল খাটতেও হয়েছে। ১৯৯৯ সালে তাঁকে পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়। ১৯৫২ সালে তিনি মাদ্রাজ বিধানসভায় নির্দল সদস্য নির্বাচিত হন। পরেরবার ভোটে দাঁড়ালেও সিপিআই তাঁকে সমর্থন দেয়। ১৯৫৭ থেকে দুবছর তিনি ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্র, আইন, কারা, বিদ্যুৎ, সেচ, সমাজকল্যাণ এবং অভ্যন্তরীণ জল মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি এবং ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। আইনে উপরে তাঁর লেখা অন্তত ৭০-১০০টি বই আছে।
দেশের নাগরিকদের যে কোনও ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারে না। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ৯ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে একথা জানায়। ৮:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতার রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় হল, সংবিধানের ৩৯বি ধারা মতে জনস্বার্থ কিংবা সাধারণ মানুষের মঙ্গলের কারণে যে কোনও ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে না সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি হৃষিকেশ রায়, বিভি নাগরত্ন, সুধাংশু ঢুলিয়া, জেবি পারদিওয়ালা, মনোজ মিশ্র, রাজেশ বিন্দাল, সতীশচন্দ্র শর্মা এবং অগাস্টিন জর্জ ম্যাসির নয় সদস্যের বেঞ্চ এই রায়দান করে। এরমধ্যে বিচারপতি বিভি নাগরত্ন আংশিক একমত এবং বিচারপতি ঢুলিয়া পুরোপুরি বিপরীত মত পোষণ করেন।
বেঞ্চ বলে, রাজ্য বা রাষ্ট্র কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর অধিকার দাবি করতে পারে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে সংবিধানের ৩৯বি ধারায় বস্তুগত সম্পদের মধ্যে পড়ে। যা বস্তুগত হওয়ার মতো যোগ্য সম্পত্তি কিনা তার উপর নির্ভর করে। শুধু তাই নয়, সেই উৎস জনজীবনের উপর কী ধরনের কাজে লাগতে পারে।
কোনও ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংবিধান বর্ণিত বস্তুগত সম্পদের উৎস কিনা এই নিয়ে বিচার চলছিল আদালতে। শীর্ষ আদালত এও বলে যে, ৩৯বি ধারায় যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, ৩১সি ধারায় সংবিধান তাতে ছাড়ও দিয়ে রেখেছে।