শেষ আপডেট: 13th December 2024 07:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্ত্রীর দায়ের করা একাধিক মামলার চাপেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিকর্মী, ৩৪ বছর বয়সি অতুল সুভাষ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সোমবার নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করার পরে সারা দেশে তোলপাড় পড়ে গেছে এই নিয়ে।
সুভাষ মৃত্যুর আগে ২৪ পাতার একটি সুইসাইড নোট রেখে গিয়েছেন, যেখানে স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, এক বিচারক ৫ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন এই মামলা মেটানোর জন্য।
অতুলের বাবা পবন কুমার, সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'আমার ছেলে বলত, অনেক দুর্নীতি আছে, তবে সে সত্যের পথে লড়বে। কিন্তু ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছিল। যদিও ও কখনও সেটা প্রকাশ করেনি।'
বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা পবন কুমার আরও জানান, অতুলের স্ত্রী ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মামলা দায়ের করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, 'আমার ছেলে ভেবেছিল, করোনার সময় ওর স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এবং ওদের এক বছরের ছেলে মামারবাড়িতে বড় হবে। কিন্তু পরে দেখা যায় মেয়েটি আমাদের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।'
পবন কুমারের দাবি, মামলার মধ্যস্থতার সময়ে এক বিচারক ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, 'মামলা মেটানোর নাম করে প্রথমে ২০ হাজার টাকা থেকে রফা শুরু হয়। এর পরে তা বাড়তে থাকে। ৪০ হাজার, এক লক্ষ... শেষমেশ বিচারক বলেন, যদি আমার ছেলে মামলা মেটাতে চায়, তবে ৫ লাখ দিতে হবে।'
অতুলের দাদা বিকাশ এই প্রসঙ্গে জানান, পরিবারে কারওই কোনও ধারণা ছিল না যে অতুল এমন চরম পদক্ষেপ নেবেন। তাঁর কথায়, 'আমরা স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতাম। ভাইয়ের বন্ধুরাও কিছু আঁচ করতে পারেনি।'
বিকাশ আরও জানান, অতুল তার ওপর এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলোর জন্য মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, 'আমার ভাইয়ের মতো আমার এবং আমার মা-বাবার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যারা মানসিকভাবে আমার ভাইকে নির্যাতন করেছে এবং মিথ্যা মামলা করেছে, তাদের শাস্তি চাই!'
অতুলের ঘটনা সামনে আসার পরে, তাঁর দীর্ঘ সুইসাইড নোট প্রকাশ পাওয়ার পরে জানা গেছে, আত্মহত্যার আগে তিনি বারবারই বিভিন্ন নেতা ও প্রতিষ্ঠানে, এমনকি রাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রিম কোর্টেও তাঁর অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা জানিয়ে চিঠি পাঠান।
অতুল তার সুইসাইড নোটের প্রতিটি পাতায় লিখেছেন, 'ন্যায়বিচার চাই'। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে ন'টি মামলা দায়ের করেছেন, যার মধ্যে খুনের চেষ্টা, যৌন হয়রানি, আর্থিক নির্যাতন, গার্হস্থ্য হিংসা এবং পণের দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে।
বিকাশ বলেন, 'যদি সেই ইমেলগুলি তাঁদের কাছে পৌঁছায়, আমরা আশা করি, কিছু একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরুষদের বিচার পাওয়ার জন্য কিছু আইন, ফোরাম বা কমিটি তৈরি করা উচিত।'
প্রসঙ্গত, দু'দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট ৪৯৮এ ধারার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিচারপতি বি ভি নাগরত্না ও এন কোটিশ্বর সিং-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, ৪৯৮এ ধারা এখন অনেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা মেটানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
বেঙ্গালুরু পুলিশের একটি চার সদস্যের দল, যার মধ্যে এক মহিলা পুলিশ সদস্যও রয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে অতুলের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছেছেন। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন এবং তদন্ত চালাচ্ছেন।