শেষ আপডেট: 6th February 2025 00:25
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে "অদ্ভুত, বিপজ্জনক এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য" বলে তীব্র সমালোচনা করলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশ ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, অথচ মোদি সরকার এখনও নীরব। জয়রাম রমেশ সরকারের কাছে জবাবদিহির দাবি করে বলেছেন—ভারতের অবস্থান কী?
জানিয়ে রাখা ভাল, প্যালেস্তাইনের ব্যাপারে নয়াদিল্লি বরাবরই ভারসাম্যের কূটনীতির পথে হেঁটেছে। কারণ, ভারতে বিপুল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী প্যালেস্তাইনের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল। শুধু সংখ্যালঘু কেন, ধর্মীয়ভাবে উদার বহু ভারতীয় প্যালেস্তিনীয়দের মানবাধিকারের পক্ষে। নয়াদিল্লির সঙ্গে প্যালেস্তাইনের সম্পর্কও কালোত্তীর্ণ। সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা তথা ঘরোয়া রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই জয়রাম মোদী সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
President Trump's loud thinking on the future of Gaza is bizarre, dangerous, and totally unacceptable.
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) February 5, 2025
A two-state solution that fulfills the completely legitimate aspirations of the Palestianian people to lead a life in independence and dignity, and also ensures security for…
এই ঘটনার প্রেক্ষাপট জানা জরুরি। ওয়াশিংটনে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু-র সঙ্গে বৈঠকের সময়ে ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছেন, গাজার বাস্তুচ্যুত প্যালেস্তিনীয়দের অন্যত্র স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন দেওয়া হোক এবং আমেরিকা এই অঞ্চল পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিক। তিনি বলেন, "গাজায় আর থাকা সম্ভব নয়। নতুন কোনও জায়গায় তাদের জন্য সুন্দর আবাসন গড়ে তুলতে হবে, যেখানে তারা নিরাপদে এবং সুখে থাকতে পারবে।"
ট্রাম্পের এই বক্তব্য নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তোলপাড় চলছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিশর, জর্ডন এবং আরব লীগ একযোগে এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য, প্যালেস্তিনীয়দের জোরপূর্বক গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে সরিয়ে দেওয়া শুধু মানবাধিকারের পরিপন্থী নয়, বরং এটি পুরো অঞ্চলে নতুন করে সংঘাতের জন্ম দেবে।
নেতানিয়াহু যখন ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করছেন, তখন তাঁর নিজের দেশেই তিনি তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে। একদিকে তাঁর দক্ষিণপন্থী জোটের চরমপন্থী নেতারা গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দাবি তুলছেন, অন্যদিকে সাধারণ ইজরায়েলিরা যুদ্ধবিরতি এবং বাকি বন্দিদের মুক্তির পক্ষে।
নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা বর্তমানে তলানিতে ঠেকেছে। দুর্নীতির মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে বিচার চলছে, যেখানে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি গণমাধ্যম ও শিল্পপতিদের সঙ্গে অবৈধ সুবিধা আদান-প্রদান করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে তিনি নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটনে আসার আগে নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ। নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, তিনি কাতারে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবেন, যারা হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নেবে।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, যা তেহরানের উপর আরও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপাবে। ট্রাম্প বলেন, "আমরা ইরানকে কখনোই পরমাণু অস্ত্র বানাতে দেব না।"
গাজা থেকে প্যালেস্তিনীয়দের উচ্ছেদ এবং আমেরিকার "মালিকানাধীন" অঞ্চল তৈরি করার ট্রাম্পের প্রস্তাব বিশ্বজুড়ে নতুন সংকট তৈরি করেছে। একদিকে এই ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে ইজরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও অত্যন্ত টালমাটাল।
জয়রাম রমেশ যখন ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি তুলছেন, তখন প্রশ্ন উঠছে—নয়াদিল্লি কি ঐতিহ্যগতভাবে প্যালেস্তিনীয়দের প্রতি সমর্থন বজায় রাখবে, নাকি বর্তমান বৈশ্বিক সমীকরণে চুপ থেকে কূটনৈতিক ব্যালান্স রক্ষা করবে? ভারতের অবস্থান এখনো অজানা, কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এখন দেখার, মোদী সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়!