প্রতীকী চিত্র
শেষ আপডেট: 5 July 2024 13:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চিন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই বাধলে, তা মোকাবিলায় কতটা সক্ষম দেশের অগ্নিবীররা? ভারতীয় সীমান্তে যখন ক্রমাগত প্রতিবেশী দুই দেশের চোখরাঙানি রয়েছে, তখন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করতে কতটা পারদর্শী এই অগ্নিবীররা? 'শহিদ' অগ্নিবীরদের পেনশন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে যখন রাজনৈতিক যুদ্ধ চলছে, তখন অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে চলতি বিতর্কে গরম মশলা ছেটালেন যুদ্ধ-প্রাক্তনী ও সেনা আধিকারিকদের অনেকেই।
কর্মরত এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের অনেকেরই মত, অগ্নিপথ প্রকল্প যুদ্ধ করার দক্ষতা এবং পারদর্শিতা দুটোরই অবনমন ঘটিয়েছে। চিন ও পাকিস্তানের লাগাতার হুমকি সত্ত্বেও অগ্নিবীরদের যুদ্ধক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগের মেঘ দেখা গিয়েছে প্রাক্তনী ও বর্তমান সেনানায়কদের মধ্যে।
২০২২ সালের জুন মাস থেকে চালু হওয়া অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে সেনা আধিকারিকদের আশঙ্কার মূল কারণ অনেকগুলি। যেমন- তাঁদের মতে, একজন স্থলসেনা, নৌসেনা বা বায়ুসেনাকে পুরোদস্তুর যুদ্ধের মতো সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাত থেকে আট বছর সময় লাগে। নিরন্তর চেষ্টা, অধ্যবসায়, অপারেশনের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা উপযুক্ত হন যুদ্ধে নামার মতো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে। কিন্তু, এই প্রকল্পে কাজ শেখার আগেই অর্থাৎ চার বছর পরেই তাঁদের ৭৫ শতাংশকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
তাঁদের মতে, এতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী। কারণ, এই দুই বাহিনীতে অনেক বেশি প্রযুক্তি জানা লোক প্রয়োজন পড়ে। যদিও স্থলবাহিনীর দক্ষতাও এর ফলে কমছে বলে তাঁরা মনে করেন। এক শীর্ষ আধিকারিক টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রশ্নের জবাবে বলেন, দিনদিন যুদ্ধকৌশল বদলে যাচ্ছে। এখন গায়ের জোর ও জওয়ান সংখ্যার জোরের থেকেও যুদ্ধকৌশল অত্যন্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। আজ যা আধুনিক, কাল তা পুরনো হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় অধিকাংশ অগ্নিবীরকেই ছেড়ে দিতে হবে জেনেও কেন বাহিনী তাঁদের অত্যাধুনিক অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র এবং কৌশলগত প্রশিক্ষণে বিশাল খরচ ও সময় অপব্যয় করবে?
তার থেকেও বড় কথা তিন বাহিনীতে নিয়োগের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এক অফিসারের কথায়, প্রতিবছর বাহিনী থেকে ৬০ হাজার সেনা অবসর গ্রহণ করেন। সেখানে অগ্নিবীর থেকে সেনায় আসছেন বর্তমানে মাত্র ৪০ হাজারের মতো। সেনাবাহিনীর বিশাল বেতনভার ও পেনশনের চাপ মুক্ত থাকতে অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনা নেই। সরকারের এই অবিচল নীতির কথা মাথায় রেখে সেনা অফিসাররা জানান, চলতি ২৫ শতাংশকে সেনায় অন্তর্ভুক্তির পরিমাণ বাড়িয়ে অন্তত ৫০-৬০ শতাংশ করা হোক।
প্রাক্তন নৌ প্রধান অ্যাডমিরাল কেবি সিং বৃহস্পতিবার এক্সে লিখেছেন, অগ্নিপথের একমাত্র লক্ষ্য হল পেনশন খরচ কমানো। কিন্তু বাস্তব হল এই প্রকল্প যুদ্ধ করার ক্ষমতার অধঃপতন ঘটাবে। যারা জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে কিছুমাত্র জানেন, তাঁরাই এটা বুঝতে পারবেন। আরেক নৌ প্রধান অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ বলেন, জাতীয় সুরক্ষার সামনে আর্থিক সমস্যা গুরুতর নয়। এই পরিবর্তন কি রণনীতি ও কৌশলকে উন্নত করবে, নাকি আরও পঙ্গু করে দেবে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
আরও কড়া ভাষায় তিনি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্র নয়, এইভাবে অর্ধপ্রশিক্ষিত হিসেবে যাঁদের নেওয়া হচ্ছে তাঁরা খুব বেশি হলে সান্ত্রী হওয়ার যোগ্য। কিন্তু আধুনিক যুদ্ধ করার উপযুক্ত নয়। সাধারণ জওয়ানদের যেখানে ১১ মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেখানে অগ্নিবীরদের প্রশিক্ষণপর্ব চলে মাত্র ৬ মাস। আরেক প্রবীণ সেনা আধিকারিক বলেন, এই প্রকল্পে বাহিনীর ভিতরে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। কেননা এক শ্রেণির সেনা মোটা টাকা বেতন, পেনশন পাচ্ছেন। অন্যদিকে অগ্নিবীররা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে একতার মানসিকতা যা সেনাবাহিনীর মূল শক্তি, তা নষ্ট হচ্ছে। যদি একশোবারের বেশি সংবিধান সংশোধন করা হতে পারে, তাহলে অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিল করতে আপত্তি কীসের, তিনি বলেন।