শেষ আপডেট: 12th July 2024 13:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাব পেশ হতে চলেছে আগামী ২৩ জুলাই। মহিলা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবারের বাজেটেও দেশের নারীকল্যাণের জন্য বেশকিছু ব্যয়বরাদ্দ ও প্রকল্পের কথা ঘোষণা করবেন। শুধু কেন্দ্র নয়, দেশের ছোট-বড় রাজ্যগুলিও ইদানীংকালে নারীকল্যাণ ও মহিলাদের আর্থিক সহায়তায় হাত বাড়িয়েছে। ঘরে বসেই রাজ্য সরকারি অনুদান হাতে পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এই কাজে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার অলিখিত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে রাজ্যগুলি, বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলি।
সম্প্রতি দু-একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গৃহলক্ষ্মীদের হাতখরচা জোগানের প্রবণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ১৬ শতাংশ মহিলা রাজ্যগুলির কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। মাথা গুনলে পরিমাণটা ১১ কোটি। কোভিডের অতিমারির পরবর্তীকাল থেকে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের মূল লক্ষ্যই হয়ে উঠেছেন গৃহবধূরা।
গৃহবধূদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে রাজ্য সরকারের টাকা ঢুকে যাচ্ছে। তা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারই হোক বা যে নামেই হোক। সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, দেশের ১৬ শতাংশ মহিলা এই প্রকল্পগুলির অধীনে মাসে মাসে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের একটি আর্থিক সমীক্ষা রাজ্য বাজেট ও তাদের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি নিয়ে খুঁটিয়ে বিচার করে এই তথ্য দিয়েছে।
দেশের ১০টি রাজ্য মহিলাদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প শুরু করেছে। শিবসেনা-বিজেপি-এনসিপি জোট শাসিত মহারাষ্ট্র হল এই তালিকার নবতম সংযোজন। দেশজুড়ে রাজ্য সরকারগুলির মহিলাদের দেয় সর্বমোট অর্থের পরিমাণ ১.৮ লক্ষ কোটি টাকা। যা মিলিতভাবে রাজ্যভিত্তিক গড় উৎপাদনের ০.৮ শতাংশ এবং দেশের গড় জাতীয় উৎপাদনের ০.৬ শতাংশ।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পৃথক একটি রিপোর্ট বলছে, মহিলাদের জন্য এই প্রকল্পগুলি বৃহত্তর এক দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে উঠছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বৃহৎ রাজ্যগুলিও তাদের রাজস্ব সংগ্রহের একটা বড় অংশ এই প্রকল্পগুলিতে দিচ্ছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকার মুখ্যমন্ত্রীর লেড়কি বহিন প্রকল্প ঘোষণা করেছে রাজ্য বাজেটে। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার ৪৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যা রাজ্যের গড় উৎপাদনের ০.৮ শতাংশ। এই প্রকল্পে মহারাষ্ট্রের ২.৬ কোটি মহিলাকে মাসে দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
কোন রাজ্যে মহিলাদের মাসে সরকারি অনুদান কত?
অন্ধ্রপ্রদেশে এই প্রকল্পের নাম জগন্না আম্মাভোডি স্কিম। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চালু হওয়া এই প্রকল্পে রাজ্যের মহিলাদের প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা দেওয়া হয়। অসমে এর নাম অরুণোদয় প্রকল্প। ২০২০ সালের অক্টোবরে চালু এই প্রকল্পে ১২৫০ টাকা করে প্রতি মাসে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের নাম লক্ষ্মীভাণ্ডার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল। এতে মহিলাদের ১০০০/১২০০ টাকা দেওয়া হয়।
মধ্যপ্রদেশ। মুখ্যমন্ত্রী লাডলি বহেনা যোজনা। শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। মাসে ১০০০ টাকা অনুদান। কর্নাটকে এর নাম গৃহলক্ষ্মী। ২০২৩ সালের আগস্টে সূচনা। মাসে ২ হাজার টাকা পান মহিলারা। তামিলনাড়ু। কালাইগনার মাগালির উরিমাই তিট্টম। গতবছরের সেপ্টেম্বরে চালু। মাসে হাজার টাকা। তেলঙ্গানায় প্রকল্পের নাম মহালক্ষ্মী। গতবছর ডিসেম্বর থেকে মাসে আড়াই হাজার টাকা পাচ্ছেন মহিলারা।
হিমাচল প্রদেশের এর নাম ইন্দিরা গান্ধী পেয়ারি বহেনা সুখ সম্মাননিধি যোজনা। এবছর ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়া এই প্রকল্পে মহিলারা মাসে দেড় হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। দিল্লিতে এর নাম মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা। এবছর মার্চে চালু। বরাদ্দ হাজার টাকা করে। এছাড়া মহারাষ্ট্রের কথা তো উল্লেখ করাই আছে।
এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২২ সালের তুলনায় মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কল্যাণমূলক প্রকল্পের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটছে। কারণ সেই টেক্কা দেওয়ার পালা। এসবিআই রিপোর্ট বলছে, ভারত ক্রমশ কল্যাণমুখী রাজ্যে পরিণত হচ্ছে। কারণ অধিকাংশ রাজ্যই এখন রাজ্যবাসীর জন্য কল্যাণকর প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, কর্নাটক, কেরলের মতো বড় রাজ্যগুলিও রাজকোষের একটি উল্লেখযোগ্য ভাগ এই খাতে খরচ করছে।
মহারাষ্ট্র ১১ শতাংশ, কর্নাটক ১৫ শতাংশ, কেরল, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ ৮-১০ শতাংশ কল্যাণকর প্রকল্পের জন্য খরচের প্রস্তাব রেখেছে বাজেটে। রাজকোষের একটি বড় অংশ এই ধরনের প্রকল্পে ব্যয় করা হলেও এতে রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থায় কোনও প্রভাব পড়বে না, বলা হয়েছে রিপোর্টে।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মহিলামুখী প্রকল্পগুলির খাতে খরচ বৃদ্ধির জন্য তারা অন্য খাতের খরচ থেকে ভরতুকি জোগান দিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে মূলধনী ব্যয় কমাতে হবে। তাহলেই এই প্রকল্পগুলি আরও সাফল্যের মুখ দেখতে পাবে।