শেষ আপডেট: 30th November 2023 14:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকার মাটিতে এক খলিস্তানি নেতাকে হত্যার চেষ্টার ষড়যন্ত্রে ভারতীয়র যুক্ত থাকার অভিযোগ আগেই করেছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়েছে নয়াদিল্লি। এরই মধ্যে আমেরিকার এক আদালতে নিখিল গুপ্তা নামে এক ভারতীয়ের নামে মামলা ঠুকেছে মার্কিন পুলিশ। চেকোস্লোভাকিয়া পুলিশ ওই ব্যক্তিকে মার্কিন গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত জুনে গ্রেফতার করে। এখন ওই ব্যক্তিকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বছর ৫২' র নিখিলের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগে ভারতে মামলা আছে। প্রাথমিক তদন্তের মুখে সে বলেছে, দেশে তাকে মামলা থেকে মুক্তি দিতে মার্কিন প্রবাসী খলিস্তানি নেতা গুরপতওয়াত সিং পুন্নুনকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমেরিকার দাবি, মার্কিন গোয়েন্দাদের সক্রিয়তায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি মার্কিন অভিযোগের জবাবে বলেন, বিষয়টি ভারতের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তির। এই ধরনের ঘটনা ভারতের নীতি বহির্ভূত।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বাগচি বুধবার জানিয়েছিলেন, ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।
এক খলিস্তানি নেতার মৃত্যু রহস্য নিয়ে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সামনে এসেছে আমেরিকায় এক খলিস্তানি নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতের যুক্ত থাকার অভিযোগ। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফের গলা ছড়িয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, আমেরিকার অভিযোগের পর আশাকরা যায় ভারত কানাডার অভিযোগকেও মান্যতা দেবে।
কূটনৈতিক সূত্র উদ্ধৃত করে একটি খবর গত সপ্তাহে প্রকাশ করেছিল লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। ভারত সরকার সরকারিভাবে সেই খবরকে তখন অস্বীকার করেনি। মার্কিন দূতাবাসও খবরটি সম্পর্কে মন্তব্য এড়িয়ে যায়। ওই খবরে বলা হয়েছিল মার্কিন নাগরিক এক খলিস্তনি নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত এক ভারতীয়। আমেরিকা সেই ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ভারত সরকারকে দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক শুধু জানায়, সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-মার্কিন টু-প্লাস-টু মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আমেরিকা কিছু গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যে নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে অভিযোগ সেই পুন্নুন আমেরিকার ওয়াশিংটনের বাসিন্দা। একই সঙ্গে কানাডারও নাগরিকত্ব আছে তাঁর। বলা হয়েছে, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যায় মার্কিন গোয়েন্দা এজেন্সির তৎপরতায়।
ওই খলিস্তানি নেতা শিখস ফর জাস্টিসের শীর্ষ কর্তা। ওই সংস্থা শিখদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। খলিস্তানি রাষ্ট্রেরও দাবিদার তারা। ভারতে একাধিক গুরুতর অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে পুন্নুনের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি সে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেই। তার আগে আমদাবাদের মোদী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচে বিস্ফোরণে ভেস্তে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছিল, আমেরিকা অভিযোগ করেছে, পুন্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল ভারতীয় এজেন্ট। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দাদের তৎপরতায় ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি নয়াদিল্লিকে জানিয়ে সতর্ক করে।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, বিদেশে খুনের চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয়র গ্রেফতারের ঘটনা দেশের জন্য অস্বস্তিকর। দেশে-বিদেশে খলিস্তানিদের আন্দোলন আরও বেগ পেয়ে যেতে পারে।
কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, আমেরিকার অভিযোগ সত্য হলে ব্যাপারে জল অনেকদূর গড়াতে পারে এবং অন্তত পাঁচটি বৃহৎ শক্তিধর দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে তৈরি মঞ্চ ফাইভ আই বা পঞ্চচক্ষুর দুটি দেশের মাটিতে ভারতের এজেন্সির সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠছে। ইতিমধ্যে কানাডা এবং আমেরিকা হরদীপ ও পুন্নুনকে নিয়ে তথ্য পঞ্চচক্ষুর শরিক দেশগুলির সঙ্গে বিনিময় করেছে।