শেষ আপডেট: 8th January 2025 08:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিব্বত মালভূমির পূর্বদিকে ব্রহ্মপু্ত্রের উজানে নতুন জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়তে চলেছে চিন। বেজিংয়ের সরকারি সূত্র অনুযায়ী সেটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বাঁধ। সেখানে বছরে ৩০ হাজার কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
চিনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তিত ভারত সরকার। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি এই বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজিং কর্তৃপক্ষ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, ‘চিনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভারত সরকার সতর্ক আছে।’ সরকারি সূত্রের খবর, কূটনৈতিক চ্যানেলে নয়া দিল্লি এই ব্যাপারে বেজিংয়ের কাছে ভারতের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। চিনা কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, এরফলে ব্রহ্মপুত্রে জলের প্রবাহের ঘাটতি হবে না।
চিনের ইয়ারলুং সাংপো নদী ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। হিমবাহ থেকে সৃষ্ট এই নদী ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, অসম হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দুই দেশের নদী বিশেষজ্ঞরাই মনে করছেন, চিন ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বাঁধ নির্মাণ করলে ব্রহ্মপুত্রে জলের প্রবাহ কমে যাবে। সমস্যায় পড়বে দু-দেশের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সেচ ব্যবস্থা। বেজিংয়ের কর্তারা অবশ্য ঘরোয়া বৈঠকে দুই দেশকেই আশ্বাস দিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্রে জলের প্রবাহ এরফলে কমবে না।
প্রকল্পটি নিয়ে অবশ্য তিব্বতে অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে এবং জলাধার তৈরির জন্য চিহ্নিত জায়গা থেকে প্রায় ১৪ লাখ মানুষকে সরানোর প্রয়োজন হবে। তাদের সরানো এবং উপযুক্ত পুনর্বাসনের বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট।
নদীর উপর বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধটি বর্তমানে চিনেই অবস্থিত। মধ্য চিনে অবস্থিত থ্রি গর্জেস বাঁধ থেকে বছরে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ব্রহ্মপুত্রের উজানে নতুন যে বাঁধটি তারা নির্মাণ করতে চলেছে সেটি থেকে তিন গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
রাজনাথ সিংহকে আগ্রায় একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকেরা ভারত সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি জানান, ভারত সরকার সচেতন আছে। চিন কী করতে চাইছে সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নদীতে বাঁধ তৈরি করা হলে দু-ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বর্ষার সময় জলের প্রবাহ এতটাই বেড়ে যায় যে ভাটি এলাকা বন্যার কবলে পড়ে। ব্রহ্মপুত্র থেকে অরুণাচল, অসম এবং বাংলাদেশের উত্তর ভাগে এই কারণে প্রতি বর্ষায় বন্যা লেগেই থাকে। আবার গ্রীষ্মে জলের টান পড়ে বাঁধে জলের স্বাভাবিক প্রবাহ আটকে যাওয়ায়। তবে চিনের এই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এখনও সেই দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয় হয়নি।