শেষ আপডেট: 10 May 2025 16:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাকিস্তান বেপরোয়া হয়ে উঠতেই অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) আঘাতের তীব্রতা বাড়াল নয়াদিল্লিও (India Pakistan War Latest Update )। শনিবার ভোররাতে ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) পাকিস্তানের আটটি সামরিক ঘাঁটিতে অত্যন্ত সুনিপুণ এবং পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এই অভিযানে ভারতের টার্গেট ছিল পাকিস্তানের সামরিক রাডার ইউনিট, গোলাবারুদের গুদাম, কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারসহ বিভিন্ন সামরিক পরিকাঠামো।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এই আটটি সামরিক ঘাঁটি হল — রফিকি (Rafiqui), মুরিদ (Murid), চকলালা (Chaklala), রহিম ইয়ার খান (Rahim Yar Khan), সুক্কুর (Sukkur), চুনিয়ান (Chunian), পাসরুর (Pasrur) এবং শিয়ালকোট (Sialkot)।
পাকিস্তানের সামরিক শক্তির মূল এই ঘাঁটিগুলি হল
১. রফিকি এয়ারবেস — পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত এই ঘাঁটি দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর (PAF) একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। রফিকিতে মূলত ফাইটার জেট ও ইউসিএভি (Unmanned Combat Aerial Vehicle) মোতায়েন থাকে। ভারতীয় বায়ুসেনা এখানে হাই-ভ্যালু টেকনিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ধ্বংস করেছে বলে জানা গেছে।
২. মুরিদ ঘাঁটি — পাকিস্তানের যুদ্ধাস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত রাখার গুরুত্বপূর্ণ গুদাম মুরিদে অবস্থিত। ভারতীয় আক্রমণে এই গুদামের একাংশে আগুন লাগে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে।
৩. চকলালা এয়ারবেস — রাওয়ালপিন্ডির এই ঘাঁটি পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স কম্যান্ড-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানেই পাকিস্তানের অনেক রাডার ও কমিউনিকেশন সিস্টেম রয়েছে। এই বেসে আঘাত হানার ফলে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড়সড় ধাক্কা লেগেছে।
৪. রহিম ইয়ার খান — দক্ষিণ পাঞ্জাবের এই অঞ্চলেও একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায় ভারত। এই অঞ্চলে পাকিস্তানের ড্রোন লঞ্চিং স্টেশন এবং ইউসিএভি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ছিল বলে ভারতীয় সেনা গোয়েন্দাদের অনুমান।
৫. সুক্কুর — সিন্ধ প্রদেশের এই সামরিক ঘাঁটিতে পাকিস্তানের বহু প্রশিক্ষিত জঙ্গি ও প্রযুক্তিগত যুদ্ধ সরঞ্জাম রাখা হয়েছিল বলে জানা যায়। এই অঞ্চলেও অস্ত্রভাণ্ডার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
৬. চুনিয়ান — এখানে পাকিস্তানের কিছু দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন ছিল বলে ধারণা। ভারতীয় বায়ুসেনার নির্ভুল অস্ত্র এই ঘাঁটির ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটগুলিকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে।
৭. পাসরুর — পাকিস্তান সীমান্তের কাছে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখানকার অস্ত্র ও গোলাবারুদের ঘাঁটি বহুদিন ধরেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজরে ছিল। শনিবারের অভিযানে তা আংশিক ধ্বংস হয়েছে বলে খবর।
৮. শিয়ালকোট — সীমান্তবর্তী এই সামরিক ঘাঁটি বহু আগেই ভারত-পাক সম্পর্কের টানাপোড়েনের কেন্দ্রে ছিল। শিয়ালকোটে পাকিস্তানের সামরিক রাডার সিস্টেম ও অ্যাডভান্সড ওয়ারফেয়ার কন্ট্রোল ইউনিট বসানো ছিল। ভারতীয় আঘাতে এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, এই আক্রমণ সম্পূর্ণরূপে সুনির্দিষ্ট এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সীমাবদ্ধ ছিল। ভারত কোনও অসামরিক এলাকা বা সাধারণ নাগরিককে টার্গেট করেনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, “আমরা কোনোভাবেই সংঘাত বাড়াতে চাই না। তবে প্রয়োজন হলে আরও কড়া জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত।”
পাকিস্তান যদিও পাল্টা দাবি করেছে যে তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে আদমপুর, ভুজ, সুরতগড়, নাগরোটা প্রভৃতি ঘাঁটির নাম রয়েছে, তবে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী এই দাবিকে “অভিনব মিথ্যাচার” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু পাকিস্তান বেসামরিক এলাকা এবং স্কুল, হাসপাতালের মতো স্থানে আঘাত হেনেছে, তাই ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে, পাকিস্তানের তরফে আবারও ড্রোন ও কামিকাজে হামলার আশঙ্কা থাকায় সীমান্তবর্তী এলাকায় উচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে।
ভারতীয় সেনার একাধিক সূত্র বলছে, পাকিস্তানের এমন “সন্ত্রাসবাদে মদত” ও “সামরিক আগ্রাসনের” জবাব আরও জোরালোভাবে দেওয়া হতে পারে যদি তারা হামলা বন্ধ না করে।
এই মুহূর্তে সীমান্তে উত্তেজনা চরমে, এবং দুই দেশের মধ্যে যে কোনও মুহূর্তে বড় রকমের সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। তবে ভারত স্পষ্ট করেছে, যুদ্ধ নয়, আত্মরক্ষা এবং প্রত্যাঘাতই নয়াদিল্লির লক্ষ্য।