শেষ আপডেট: 10 May 2025 20:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সামরিক মুরোদ পাকিস্তানের নেই। তাদের অর্থনৈতিক মুরোদও নেই। বৃদ্ধির দর তলানিতে এসে ঠেকেছে। ঠিক এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (IMF) থেকে পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার শর্তেই আমেরিকা ইসলামাবাদকে যুদ্ধবিরতিতে (India Pakistan Ceasefire) রাজি করিয়েছে বলে নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের দাবি। মার্কিন কূটনীতিকরা অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কিছু বলেনি।
নয়াদিল্লির একাংশ কূটনীতিকের দাবি, যুদ্ধবিরতির জন্য পাকিস্তান রাজি হয়েছে কেবল ভারতের চাপেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতির জালে ঘিরে ফেলে ইসলামাবাদকে একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছে এই সিদ্ধান্ত নিতে। আমেরিকা পাকিস্তানের উপর এমন এক শর্ত চাপায়, যার ফলে ইসলামাবাদের কাছে যুদ্ধবিরতি ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
সূত্র অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার (IMF) থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের অস্থায়ী ছাড়পত্র জারি করে আমেরিকা, কিন্তু সাফ জানিয়ে দেয় — এই অর্থ তখনই ছাড়া হবে যদি পাকিস্তান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়। শুধু তাই নয়, পুরো ঋণ পেতে হলে পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির সমস্ত শর্ত পূরণ করেই যেতে হবে।
পাকিস্তানকে এই ঋণ কেন দিচ্ছে আইএমএফ (IMF)? খুব সহজ কথায় বলা যায়, ‘Extended Fund Facility’ বা বিস্তৃত তহবিল সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যার উদ্দেশ্য পাকিস্তানের টালমাটাল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা।
ভারত চেয়েছিল, এখনই আইএমএফ এই ঋণ পাকিস্তানকে না দিক। কারণ, নয়াদিল্লির আশঙ্কা ছিল, এই টাকা ভারত বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করবে ইসলামাবাদ। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। কিন্তু বড় মুখ করে বলেছিলেন, ‘ভারতের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ’ হল।
কিন্তু ইসলামাবাদ যে ঢোক গিলতে বাধ্য হয়েছে, তা এতক্ষণে স্পষ্ট হল বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার আইএমএফ বোর্ডের সভায় ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ছাড়ের পাশাপাশি ‘Resilience and Sustainability Facility’-এর আওতায় অতিরিক্ত ১.৩ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবও বিবেচনায় আসে। সূত্রের দাবি, পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদে মদত দিলে বা যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করলে ওই টাকা আর দেওয়া হবে না।
জলচুক্তি থেকেও পিছপা নয় ভারত
শনিবার ভারতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইন্দাস জলচুক্তির স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। অর্থাৎ, পাকিস্তানের সঙ্গে আর কোনও হাইড্রোলজিকাল (জলসম্পর্কিত) তথ্য ভাগ করে নেবে না ভারত। বরং, উত্তর ভারতের তিনটি নদীকে ঘিরে যে জলের পরিকাঠামো নির্মাণ চলছে, তা দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ — নতুন ভারতীয় নীতি মেনে নিল আমেরিকা
এই মুহূর্তে ভারতের ‘সংশোধিত যুদ্ধনীতি’-কে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে আমেরিকা। শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে সেই সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে — কোনও রকম সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে, তা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বিবেচিত হবে। আন্তর্জাতিক মহলে এই বার্তা ভারত যে কতটা স্পষ্ট ও অনড়ভাবে পৌঁছে দিয়েছে, তা এই স্বীকৃতি থেকেই স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা পাকিস্তান এখন যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছে না। তবে এই চুক্তি কেবল অস্ত্র বিরত রাখার নয়, বরং ভারতের কূটনৈতিক পরাক্রমেরও নিদর্শন।