পূজা খেদকার।
শেষ আপডেট: 16th July 2024 09:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিতর্কিত আইএএস পূজা খেদকারের বিরুদ্ধে ফের নতুন অভিযোগ। এবার জানা গেল, ২০২২ সালে তিনি আংশিক প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্রের জন্য যে আবেদন করেছিলেন, তা নাকচ করে দিয়েছিলেন পুনের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগে ট্রেনি আইএএস অফিসার পূজা খেদকারকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এটাই একমাত্র অভিযোগ নয়। দাবি করা হয়েছে, তিনি আইএএস অফিসার হওয়ার জন্য 'প্রতিবন্ধী' হওয়ার নাটক করেছেন! আংশিকভাবে দৃষ্টিহীন ক্যাটেগরি এবং অন্যান্য অনগ্রসর ক্যাটেগরির আওতায় ভুয়ো সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। এই ঘটনায় এখন তোলপাড় দেশে।
পুণের কাশীবাই নাভালে মেডিক্যাল কলেজের ডিরেক্টর অরবিন্দ ভোরের দাবি, এমবিবিএস পড়ার সময়ে পূজা ওবিসি কোটা ব্যবহার করলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিষয় সামনে আসেনি। অথচ একথা সামনে এসেছে, যে ইউপিএসসি পরীক্ষায় তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা কোটার সুযোগ নিয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতেই ডিরেক্টর জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে ভর্তির সময়ে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট পূজা জমা দিয়েছিলেন, সেখানে প্রতিবন্ধকতার কোনও উল্লেখ ছিল না। তবে ২০২২ সালে আংশিক প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন পুনের হাসপাতাসে। কিন্তু চিকিৎসকেরা তা নাকচ করে দেন, ওই শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় বলে। পূজাকে চিঠি দিয়ে স্পষ্ট জানানো হয়, 'দুঃখিত, আপনার আবেদন মোতাবেক আপনাকে এই প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।'
প্রসঙ্গত, এর আগেও আহমেদনগরে প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র জোগাড়ের চেষ্টা করেছিলেন পূজা। ব্যর্থ হয়েছিলেন সেখানেও। এমনকি পূজাকে অন্তত ৬ বার মেডিক্যালের জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তিনি নানা অজুহাতে সেই টেস্ট দিতে যাননি। ২০২২ সালে একাধিকবার তিনি মেডিক্যাল পরীক্ষা এড়িয়ে গেছিলেন। দিল্লির এইমস থেকে তাঁকে ডাকা হলেও তিনি নিজেকে করোনা পজিটিভ দাবি করে সেই পরীক্ষা এড়ান।
তা সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, উঠছে সেই প্রশ্ন। কারণ ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পূজা যে যে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন তার সবকটিই ভুয়ো বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজেকে আংশিক দৃষ্টিশক্তিহীন এবং মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেছিলেন। এইসব তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীরা ইউপিএসসি-র তরফে বিশেষ সুবিধা পান। তাই পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার পরও পূজা ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৮২১ র্যাঙ্ক করেছিলেন। যদিও পরীক্ষায় পাশ করার পর যখন তাঁকে মেডিক্যালেও পাশ করতে হত, সেই সময়ে তিনি কোনও মেডিক্যাল টেস্ট দিতে যাননি বলে অভিযোগ।
পরবর্তী সময়ে বাইরের একটি সেন্টার থেকে এমআরআই রিপোর্ট ইউপিএসসি-তে জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটিও নাকচ করে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, পরিবারের রাজনৈতিক যোগাযোগের সুবিধা নিয়ে সেই রিপোর্ট পাশ করিয়ে নিয়েছিলেন পূজা। এরপর ট্রেনি আইএএস অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে হালে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শুরুতে মহারাষ্ট্রের পুণেতে অ্যাসিসট্যান্ট কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তবে পূজার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রেনি অফিসারদের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা নয়, সেগুলি নিচ্ছিলেন তিনি। তাছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে গাড়িতে লালবাতি এবং মহারাষ্ট্র সরকারের বোর্ডও লাগিয়ে ঘুরতেন পূজা। এমনকী অ্যাডিশনাল কালেক্টর না থাকার সুযোগে তাঁর ঘরে ঢুকে চেয়ার ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি নিজস্ব লেটারহেড, আলাদা গাড়ি, ভিআইপি নম্বরেরও দাবি ছিল তাঁর। বর্তমানে পূজাকে ওয়াশিম জেলার অ্যাসিসট্যান্ট কালেক্টর করে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।
পূজা ও তাঁর পরিবারের অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি, এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। পূজা বিশেষজ্ঞ কমিটির সামনে শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছেন, সেই কমিটি যে রিপোর্ট দেবে, তাই মেনে নেবেন।