অনেকের ধারণা হয়েছিল, যে সময়ে পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েছিলেন পিকে সাউ তাঁকে নির্ঘাত মারধর করা হবে।
পূর্ণম কুমার সাউ
শেষ আপডেট: 15 May 2025 09:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পহেলগাম কাণ্ডের (Pahalgam Attack) পর আরও একটি বড় ঘটনা ঘটে গেছিল দেশে। পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে ডিউটিতে থাকাকালীন 'ভুল করে' সীমান্ত টপকে পাকিস্তানে (Pakistan) চলে গেছিলেন বাংলার বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ (Purnam Kumar Shaw)। প্রায় ২২ দিন পাক সেনার হাতে বন্দি থাকার পর অবশেষে বুধবার দেশে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু এই ২২ দিনে তাঁর সঙ্গে কী কী হয়েছে, তা জানা গেল এবার।
অনেকের ধারণা হয়েছিল, যে সময়ে পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েছিলেন পিকে সাউ তাঁকে নির্ঘাত মারধর করা হবে। কিন্তু সূত্রের খবর এমনটা কিছুই করা হয়নি। তার মানে অবশ্য এই নয় যে, ভারতীয় জওয়ানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছিল পাক সেনা। একেবারেই তা নয়। শারীরিক অত্যাচার না করে বরং তাঁর মানসিকভাবে আঘাত করেছিল তারা।
যতদিন পাক সেনার হাতে বন্দি ছিলেন পূর্ণম ততদিন তাঁকে দাঁত মাজতে দেওয়া হয়নি! শুধু তাই নয়, সারাক্ষণ চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল তাঁর যাতে তিনি জানতেই না পারেন যে কোথায় রাখা হয়েছে তাঁকে। এদিকে ঘুমোতেও দেওয়া হয়নি পূর্ণমকে। বিএসএফ সূত্রে খবর, রোজ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হত তাঁকে। পাক সেনা নাকি বারবার সীমান্তের খবর জানতে চাইত তাঁর থেকে। কোথায় কতজন বিএসএফ জওয়ান পোস্টিংয়ে রয়েছে, সেই তথ্যও জানতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু ভারতীয় জওয়ান কোনও তথ্যই দেননি পাক সেনাকে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামের বৈসরনে জঙ্গি হামলার পরই পাঞ্জাবের ফিরোজপুর থেকে পূর্ণম পাকিস্তানে ঢুকে পড়েছিলেন। দুপুরে বিশ্রাম নিতে গিয়ে অজান্তে একাজ করে ফেলেন তিনি। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে জওয়ানদের বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বার বার বৈঠকের পরও ফেরানো যায়নি পূর্ণমকে। অবশেষে গত ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হলে পরিস্থিতি শিথিল হয়। তারপরই জানা যায়, ফিরছেন পূর্ণম।
স্বামী পাক সেনার হাতে আটক হয়েছেন এই খবর শুনে মাথায় বাজ পড়েছিল রজনীর। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই তিনি ছুটেছিলেন হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় বিএসএফের দফতরে। গিয়েছেন স্বামীর কর্মস্থলেও। কিন্তু অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁর। এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আলাদা করে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। বিএসএফ জওয়ানকে যাতে দ্রুত বাড়ি ফেরানো যায়, সেই নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। বুধবার আটক হওয়ার ২৩ দিনের মাথায় পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন পিকে সাউ।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরেন ওই জওয়ান। সূত্রের খবর, নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার পরই স্ত্রী রজনীকে ভিডিও কল করেছিলেন পিকে। স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে গিয়ে দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সংবাদমাধ্যমে রজনী জানান, 'একমুখ দাড়ি হয়ে গেছে দেখলাম। আমাকে বলল টেনশন না করতে। ও ঠিক আছে। দাড়ি কাটতে হবে তাই পরে কথা বলবে।'