দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাচ্চারা ট্র্যাম্পোলিনে লাফালাফি করছিল। কেউ ভেলপুরি খাচ্ছিলেন, কেউ আবার একসঙ্গে সেলফি তুলছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামের (Jammu Kashmir Pahalgam Terror Attack) বৈসরন ভ্যালির অপরূপ সৌন্দর্য্যে সকলে তখন মুগ্ধ। ঠিক সেই সময়ই তারা এল। হঠাৎ নাম, ধর্ম জিজ্ঞেস করল। তারপরই গুলি! এক নিমেষে সব শেষ। মুহূর্তের আনন্দ বদলে গেল বিষাদে। 

১০ মিনিট। জঙ্গিরা ২৬ জনের জীবন মাত্র এইটুকু সময়েই মধ্যে শেষ করে দিয়েছে। এক পর্যটক দূর থেকে সেই মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড করেন যেখানে দেখা যাচ্ছে, সবুজ ঘাসের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে একাধিক মৃতদেহ। চারপাশে শোনা যাচ্ছে শুধু গুলির শব্দ আর প্রাণভয়ে মানুষের আর্তনাদ। কিন্তু হামলার কয়েক সেকেন্ড আগে পর্যন্তও কেউ টের পাননি কী হতে চলেছে। কেন কেউ কিছুই আঁচ পেলেন না?

সূত্র মারফৎ জানা গেছে, বৈসরন ভ্যালির জঙ্গল থেকে ৫ জন জঙ্গি ঘটনাস্থলের মূলত তিনটি স্পটে গেছিল যেখানে পর্যটকদের ভিড় একটু বেশি ছিল। তাদের কাছে বন্দুক তো বটেই, বডি ক্যামও লাগানো ছিল বলে খবর। ওই ক্যামেরাতেই তারা এই নারকীয় হত্যালীলা রেকর্ড করেছে! পুলিশ এবং সেনার পোশাক পরে থাকায় পর্যটকরা কেউ দূর থেকে তাদের দেখে থাকলেও সন্দেহ করেননি। ভেবেছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরাই টহল দিচ্ছেন। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারলেন যে এই ৫ জন কারা, ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। 

মঙ্গলবার দুপুর ১.৫০-এ প্রথম গুলি চলেছিল। তারপর টানা ১০ মিনিট এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ২৫ পর্যটক এবং এক কাশ্মীরিকে হত্যা করে জঙ্গিরা। আহতরা জানিয়েছেন, নাম এবং ধর্ম জিজ্ঞেস করেই তারা গুলি চালিয়েছিল। হত্যালীলা চালানোর পর ফের তারা জঙ্গলের দিকেই পালিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রায় আধঘণ্টা পর স্থানীয় পুলিশের কাছে খবর গেছিল। নীচ থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছতেও বেশ খানিকটা সময় লাগে। আহতদের দাবি, দ্রুত সাহায্য পাওয়া গেলে অনেককে হয়তো বাঁচানো যেত। 

‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকা, পহেলগাম (Pahalgam) শহর থেকে ছয় কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত। নৈসর্গের টানে বসন্ত আর গ্রীষ্মকালে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। জঙ্গি হামলার পরপরই ভারতীয় সেনা, সিআরপিএফ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় আহতদের সরাতে হেলিকপ্টার নামানো হয় সেখানে। স্থানীয়রাও হাতে হাত মিলিয়ে আহতদের নিচে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেন।