শেষ আপডেট: 10th August 2024 23:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে মার্কিন শর্ট সেলিং সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফের বোমা ফাটাল। এবং এমন বোমা ফাটাল যে মোদী জমানায় ভারতে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া তথা (সেবির) স্বশাসিত ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়ে গেল।
কী বোমা ফাটিয়েছে হিন্ডেনবার্গ?
শনিবার সকালে তার ইঙ্গিত দিতে গিয়ে হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছিল, ভারতে ফের বিরাট কিছু ঘটতে চলেছে। তার পরই ভারতীয় সময়ের বেশ রাতের দিকে সেই বোমা আছড়ে পড়ে! যাতে শুধু শেয়ার বাজার আন্দোলিত হয়ে গেছে তা নয়, এই বিস্ফোরণ ঘরোয়া রাজনীতিতেও তোলপাড় ফেলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, একটি হুইসলব্লোয়ারের তথ্য উদ্ধৃত করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জানিয়েছে, সেবির বর্তমান চেয়ারপার্সন মাধবী বুচ এবং তাঁর স্বামীর আদানির অফশোর কোম্পানি অংশীদারিত্ব রয়েছে।
ভারতে উপার্জিত অর্থের উপর করফাঁকি দিতে বিদেশে সংস্থা খোলার প্রবণতা অনেক দিন ধরেই রয়েছে। হিন্ডেনবার্গের দাবি, আদানির এমনই অফশোর কোম্পানিতে লতায়পাতায় স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে।গত বছর জানুয়ারি মাসে এই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টেই দাবি করা হয়েছিল, আদানি কীভাবে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে ভুয়ো কোম্পানি খুলে টাকা সরিয়েছে। সেই অভিযোগের তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছিল সেবির উপর। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ ছিল।
শনিবার হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট ঠারেঠোরে বোঝাতে চেয়েছে যে সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। যাঁর উপর তদন্ত ভার, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর তলে তলে আঁতাত রয়েছে তা নয়, বাণিজ্যিক স্বার্থেও জড়িয়ে রয়েছেন মাধবী। হিন্ডেনবার্গ এদিন বলেছে, তাদের রিপোর্ট প্রকাশের পর ১৮ মাস কেটে গেছে। অথচ আদানির অসদাচরণ এবং মরিশাস ও বিদেশে অন্যান্য ভুয়ো কোম্পানিতে তাদের লেনদেনের ব্যাপারে সেবি বিষ্ময়কর ভাবেই কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
হিন্ডেনবার্গের দাবি, মাধবী বুচ ও তাঁর স্বামী মরিশাস ও বারমুডার এমন সব ভুয়ো বিদেশি সংস্থায় বিনিয়োগ করে রেখেছেন যাদের সঙ্গে গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির প্রত্যক্ষ যোগ ছিল। এই সব বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০১৫ সালে। তার পর ২০১৭ সালে সেবির পূর্ণ সময়ের সদস্য হিসাবে নিয়োগ করা হয় মাধবী বুচকে। পরে ২০২২ সালে সেবির চেয়ারপার্সন হন মাধবী।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মাধবী সেবির সদস্য হওয়ার ঠিক আগে এই সব বিদেশি কোম্পানিতে স্ত্রীর সমস্ত বিনিয়োগ নিজের নামে করে নেন তাঁর স্বামী। যাতে মাধবীকে নিয়ে কোনও স্ক্রুটিনি হলে প্রশ্ন না ওঠে। হিন্ডেবার্গের দাবি, এই সব বিনিয়োগ এমন ভাবে করা হয়েছিল যাতে বহু স্তর ছিল এবং জটিলতাও ছিল। তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন।
এখানেই থামেনি হিন্ডেনবার্গ। তাদের দাবি, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট সংস্থার ব্যাপারে মাধবীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই সংস্থা ব্ল্যাকস্টোন নামে একটি কোম্পানিকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল, যাতে তাঁর স্বামী ছিলেন পরামর্শদাতা। হিন্ডেনবার্গের এই রিপোর্ট হাতিয়ার করে রবিবার থেকে হই হই করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। এখন দেখার আদানি গোষ্ঠী বা মাধবী বুচ এ ব্যাপারে কী প্রতিক্রিয়া জানায়।